তথাপি বইমেলা

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

কতবার বলেছি আমি কবি হয়ে গেছি
আমাকে লিখতে দাও, বিরক্ত কোরো না
সে বহুদিনের না মাজা দাঁতগুলো বের করে বিশ্রী হাসি হাসে
হলদেটে দাঁতের দুর্গন্ধে গা বমি বমি লাগে
দরজা বন্ধ করলে, বেহায়ার মতো অভিমান করে বলে
এই আমি না থাকলে তুমি কবিতা লিখতে কি করে বলো দেখি?
আমি হলাম গিয়ে —
দুহাতে পুরোনো ডায়েরিটা তুলে তার দিকে এগিয়ে যেতেই কাচু মাচু ঠোঁট দুটো একসাথে বিড়বিড় করে ওঠে
দাও দেখি তোমার কবিতা দিয়ে আমার পেট ভর্তি করে।

আমি নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করি
দুচোখে আবেশ মেখে ভাবতে চাই শান্তিনিকেতনের খোলা প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছি প্রেমকে সঙ্গে করে,
রাশি রাশি খোয়াই এর উপর আমাদের ভালোবাসা বিছানো
জংলা নদীর জল ছিটিয়ে তাকে আদর করতে যাব
এমন সময় একটা রক্তমাখা দেহ নদীর পাশে গড়াগড়ি খায়
কলমের কালি বেমালুম লাল হয়ে গেলো
কি লেখা তা স্পষ্ট নয় কার‌ও কাছে,
চিৎকার করে বলি তুমি দূরে যাও আমি প্রেম লিখবো এখন
সে ততোধিক জোরে চিৎকার করে বলে আমি কি তোমার প্রেম নই?
মহাপুরুষের বড় বড় বাণী আওড়াও কবিতার আসরে
‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’
কোথায় তোমার প্রেম?
আমার দেহটা ক্ষতবিক্ষত করে যারা রক্তে স্নান করালো
তাদেরকে কিছু বলতে পারো না কেমন তুমি কবি??

ব্যঙ্গক্তিতে, কটুক্তিতে জ্বলতে জ্বলতে খাতা কলম তুলে রাখি
দু চোখের তন্দ্রা বেয়ে সজাগ হয় অনুভূতি
স্বপ্নের বালুচরে গুটি গুটি পায়ে বইমেলা এসে দাঁড়ায়,
কত কত নামকরা কবির বই সাজানো
কবিদের গলায় মালা, হাতে স্মারক
মুখে বিশ্বজয়ের চিহ্ন মাখানো হাসি!
মঞ্চে মঞ্চস্থ নাটক, কবিতা, নৃত্য
সেখানে প্রকৃতি, প্রেম, প্রতিবাদী ভাষা সব উপস্থিত,
কোনো কিছুরই চাহিদা মিটে যায়নি
মেলা ভর্তি বই তবুও আকন্ঠ খিদে
বছরের পর বছর নতুন নতুন কবি তৈরি হয়
আসে তাঁদের বই
প্রতিবছরই হয় বইমেলা
সবকিছুর পেছনে দাঁড়িয়ে হলদেটে দাঁত, রক্তমাখা শরীর, কিছু প্রেম, কিছু প্রকৃতি
বইমেলা আসে বইমেলা যায়
কলম চেয়ে থাকে একটা সঠিক কবিতার অপেক্ষায়।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )