দুর্গা

সুজান মিঠি (জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান)

গায়ের রং কালো হওয়ায় মেয়েটির নাম কৃষ্ণকলি দেয়নি কেউ,
দিয়েছিল কালি।
বছর তেরোয় তার কালো গায়ে চড়ল শাড়ি,
সিঁথি ভর্তি সোহাগ
নাকে নোলক একখানা।

কামিন স্বামী ফুলশয্যার মাদুরে শুয়ে বলল
গোটা কয়েক বাড়ি ফাঁকা আছে
রান্না বান্না টুকটাক…
দেখবি আমাদের অভাব থাকবে না আর!

কোমর বেঁধে কালি ছোটে
এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি
রান্নাঘর থেকে কলতলা
শাক থেকে মাছ
ঘাম থেকে নাম
কালি… একবার এদিকে আয় তো!
কালি… শুনে যা তো!

না, কালির এ হেন পারদর্শিতায় কেউ তাকে কখনো
দশভূজা বলেনি,
কেউ বলেনি, ভাগ্যে কালি ছিল আমাদের!

কালি বাড়তে বাড়তে মাটি হল একদিন
হামাগুড়ি দিল তার আলো
সামলে নিয়ে সব, কালি ছুটে গেল এ বাড়ি ও বাড়ি
দশ বাড়ি তের ঘর উঠোন প্রাচীর…
প্রাচীরের আড়ালে বসিয়ে রাখত হাসি তার
এই কালি তুই ফের তোর মেয়েকে নিয়ে এসেছিস?
বলেছি না আনবি না!
কালির চোখ ছলছল…
ওর বাপ ভোর বেলা বেরিয়ে যায়
কোথায় রেখে আসবো মা ওকে?
দুটো মুড়ি ঠোঁটে গেঁথে মেয়েকে দিয়ে আসে
চোখের আড়ালে…

একদিন কালির মেয়ের ছোট্ট গায়ে মাছি এসে বসল।
ভনভন করে উড়ল তার চারপাশে।
সাংবাদিকরা কালিকে মাঝে রেখে প্রশ্ন করল,
তোমার মেয়েকে যারা মেরেছে বলো তাদের তুমি কী শাস্তি চাও?
শেয়াল কুকুরগুলো দূরে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো।
সাংবাদিকরা বিরক্ত,
আঃ! একটু জোরে জোরে কাঁদো!
জোরে জোরে…

কালিকে কেউ কখনো দশভূজা বলেনি
কেউ কোনোদিন দুর্গা বলেনি
বলেছে, কালি! কবে আসবি কাজে?
বলেছে, যে গেছে সে তো আর আসবে না,
তুই আয়…

শেয়াল কুকুরগুলো কালির বাড়ির চারপাশে
লালা ঝরায়…
হাড়গোড়গুলো বড্ড নরম ছিল রে…

কালিকে কেউ কখনো দুর্গা বলেনি,
বলেছে, তুই ছোট মানুষ ওদের সঙ্গে পারবি কেন?

একদিন রাত গভীর হয়
কালির গা ঘন আরো কালো
চোখে আগুন,
এলোচুলে প্রবল দীর্ঘ শ্বাস!

কালি ছুটতে থাকে!
তার হাতের দা ত্রিশূল হয়ে ওঠে!
ভীষণ স্পর্ধায় সূর্যের মত জ্বলতে থাকে!
শেয়াল কুকুরদের ধরে ঝপাঝপ কোপ দেয় কালি।
রক্তে ভিজে যায় মাটি।
প্রলয়ের হাসি হাসে বাতাস,
ঝড় ওঠে… ভয়ংকর ঝড়!

বিস্মিত বিচারক জানতে চান,
কে মেরেছে এত শয়তান?
কার হয়েছে সাহস?
গুনগুন স্বর স্পষ্ট হয়,
জনতা ঘোষনা করে,
দুর্গা! দুর্গা! ওর নাম দুর্গা!
দুর্গা ওর নাম।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )