পৃথিবী ও কুকুরছানা
সুবিমল মুখার্জ্জী (পূর্ব বর্ধমান)

একটা কুকুরছানা-
ভূমিষ্ঠ হল পানা পুকুরের পাশে, ভর্তি আবর্জনা জঞ্জাল আর মাটিতে মাখামাখি, মুখে তবু তার ম্লান হাসি।
জন্মানোর প্রথমেই প্রথম চুম্বনে অভিনন্দন জানাল পৃথিবীকে।
পৃথিবী বলল, ফিরে যাও তুমি…
বৃথা চুম্বনে স্পর্শে হবে পাপিষ্ঠ।
যারা আমারই পৃষ্ঠে বাস করে তারা ভালবাসেনা আমার শ্যামলতা, সৌন্দর্য্য।
অতিষ্ঠ করে তোলে পেষনে পেষনে আমার বুক চিরে এরা বোঝেনা আমার তীব্র যন্ত্রণা এদের কাছে আজ আমি অসহায়।
তাই, বাঁচতে গেলে
তোমাকে ঐ জীর্ণ শরীরে করতে হবে সংগ্রাম।
বিপদের সামনে ঝুঁকি নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার জন্য চাই কঠিন কঠোর প্রাণ।
“পারবো তো?”
পৃথিবীর প্রশ্নে সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
ধীরে ধীরে কুকুর ছানাটা বড় হল লোকের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে কিন্তু খাবারের চেয়ে সে বেশী পেল লাথি ঝাঁটা আর প্রবঞ্চনা।
তবু সে বাঁচতে চায়।
চায় ভাল খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে। তাই একদিন-একটুও খাবার পাইনি খুঁজে ঘুরে ফিরে সারাদিন, মুখ তাই অতি মলিন।
এক ভদ্রলোকের খাবার কেনা দেখে ছুটে গেল তাঁর কাছে।
ভেবেছিল কোট প্যান্ট পরা ভদ্রলোক হয়ত কিছু দেবে খেতে।
তাই ল্যাজ নেড়ে জানাল হৃদয়ের অভিনন্দন।
পরে সে জন পিছু ফিরে দেখে খাবারের প্রতি এক লালস দৃষ্টি।
সজোরে বুটের লাথি দিল মাথাটার পরে, খাবারের বদলে তার নিজেরই রক্ত মাথা থেকে মুখে গড়িয়ে পড়ল।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার রক্তাক্ত কান্না ঝরে পড়ল মাটিতে।
তবু সে খাবার চায়-খালি ঠোঙাটাকে মাটিতে দেখল, খাবার কিছুই নাই।
সারাদিন পরে সন্ধ্যায় সে জানাল তার মাকে, সে বড় ক্ষুধার্ত, এগিয়ে দিল ফাটানো মাথাটাকে।
মা তার কোথা পায়?
মৃদু কেঁদে কহে, “ওরে আরও মার খাবি, তবেই পাবি এক টুকরো রুটি।”
অব্যক্ত ধবনিতে কেঁদে বলল, ভগবান আর কতদিন-জীবনের আর কতটুকু আছে রক্তের শেষ ঋা?
তবু পেলনা কিছু। এক নাবালক কিনল খাবার, ছুটে গেল তার পিছু।
ভাবে লোকে তাকে কামড়ায় দিল লাঠির ঘা হাড় ভাঙা মাথাটায়।
বেদনা বিরহী অবলা মাতৃস্নেহের চোখের জল গড়িয়ে পড়ল পুত্রের রক্তাক্ত ক্ষতে।
রাত্রির অন্ধকার আরও জমাট হয়ে উঠল মুমুর্ষু পুত্রের চোখে
পৃথিবীর প্রশ্নের শেষ জবাব দিলো পারলাম না পৃথিৰী, আমি বাঁচতে পারলাম না।