“লেখক হওয়া সহজ কিন্তু লেখিকা হওয়া কঠিন।”
মৌসুমী মণ্ডল (কলকাতা)

তোমার মাথায় গল্প ঘুরে বেড়ায় ,তুমি গল্পগুলোকে কলমের কালি দিয়ে কাগজে আটকিয়ে রাখতে চাও , গল্পের চরিত্রের ডায়লগগুলো তোমার মাথায় সারাদিন প্রতিধ্বনি করে ।
ধরো, তুমি বাড়িতেই থাকো,মানে গৃহবধূ আর কি! কোনো একদিন তুমি ভাবলে, আজ আর রান্না বান্না করবো না, গতকালের বেঁচে যাওয়া রান্না দিয়েই চালিয়ে দেবো। এই কথা ভেবে যখন তুমি ফ্রীজ খুলবে, ঠিক তখনই গত সপ্তাহে কিনে আনা কুমড়োর ফালিটা তোমাকে ডেকে বলবে ,"কী গো আর কতদিন আমায় এভাবে ফেলে রাখবে ?দ্যাখো ফ্রিজে কিছু পুঁই ডাটা আর মাছের মাথা আছে ,ওগুলো দিয়ে আমাকে একটু কেটেসেটে রেঁধে ফেলো ।"
মাছ বের করতে যেই না তুমি ডিপ ফ্রিজ খুলবে অমনি কৌটোর ভেতরে বরফ হয়ে থাকা চিকেন পিসগুলো তোমাকে বলবে ,"বাচ্চারা তো মাছ-টাছ পছন্দ করে না , এক কাজ করো, আমায় নিয়ে নাও, বেশ কষা কষা করে রেঁধে ফেলো দিকি।
“
কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা নেওয়ার জন্য ফ্রিজের নিচের তাক খুলবে অমনি দিন চারেক আগে আনা পালং শাক তোমাকে বলবে ,”বলি ও হতচ্ছাড়ি, আমায় ক্যানো পচাচ্ছিস গা?! রেঁধে ফেল না আমায়। আজ না রাঁধলে কালই নির্ঘাত আমায় ফেলে দিতে হবে, এতো অপচয় ভালো
নয়।”
ডালের কৌটো বলবে ,"তোমার বর তো ডাল ভালোবাসে আমাকেও রেঁধে ফেলো । রান্নাঘর আর গ্যাস স্টোভ হুঙ্কার দিয়ে বলবে ,"এতো যে আমাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে , দয়া করে আমাদের ভালো করে মুছে -টুছে রেখে যাবে ।"
সকালে ধুয়ে দেওয়া কাপড়গুলোকে ছাদ থেকে আনতে যাবে, পেছন থেকে বারান্দাটা তোমাকে রিনরিন করে বিনীত ভাবে বলবে ,"সূক্ষ্ম ধূলা জমে আছে আমার উপরে ,বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। একটু পরিষ্কার করে দেবে গো ?
এরপর ঘরের মেঝে অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে বলে উঠবে " উফ ! ! আমার উপরে বড্ড জঞ্জাল ! ! আর সইতে পারছি না,দে না রে একটু ঝাড়ু দিয়ে।"
ঠিক এমনভাবে খাবার টেবিল, বিছানাপত্র, আলমারি, আলনা সবাই বলবে,"আমরা তো তোর সংসারেরই অংশ, রাখনা আমাদের একটু পরিপাটি করে।"
তাদের দাবী আবদার মিটিয়ে তুমি বাথরুমে ঢোকার সুযোগ পাবে। উঁকি দিয়ে দেখবে শৌচাগার রেগেই আগুন। বলে বসলো ," এই যে মহাশয়া, গত দু'দিন যাবত আমার উপর তোমরা সবাই মিলে যে নির্গমন করে যাচ্ছ, বলি আমি তো একটা কমোড, নাকী!? সব কিছুর একটা সীমা আছে। গত দুদিন জীবাণুরা আমার চারপাশে হেঁটে বেরাচ্ছে, গা ঘিনঘিন করছে, দয়া করে আমায় হারপিক দিয়ে ভালো করে মেজে দেবে।"
এদের সবার আর্জি শুনে আর তাদের দাবী আবদার মেটাতে মেটাতে তোমার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে। ঠিক তখনই টবের সাধের গাছগুলো বলবে,"আমাদেরও তো ক্ষিদে পায়, তেষ্টা পায়।আমাদের জল দিতে আর যত্ন করতে ভুলো না যেন!"
সব দাবি শেষে বাড়ীর সবাইকে খাইয়ে, বিছানাপত্র গুছিয়ে দিয়ে যখন তুমি একটু বসবে, তোমার শরীর তোমাকে বলবে, "কী গো আর কতো! এইবার আমায় একটু বিশ্রাম দাও ।"
তোমার চোখ দু'টো বলে উঠবে ," আমি যে আর খোলা থাকতে পারছি না ,এবার একটু বিশ্রাম চাই।"
তুমি তোমার চোখ আর শরীরের সব আবদার উপেক্ষা করে খাতা কলম নিয়ে বসতে যাবে , বা ফোনের নোট প্যাডে লেখার জন্য ফোন হাতে নেবে,ঠিক তখনই ...তোমার খাতা, কলম আর স্মার্ট ফোন বলে উঠবে, "এভাবে তুমি লেখিকা তকমা চাও ! ! তুমি সারাদিন ধরণীর যাবতীয় কাজ শেষে এখন এলে আমাদের কাছে ঢুলুঢুলু চোখে ! ! রোজ তুমি এমনই করো। ভেবেছ কী তুমি, লেখিকা হওয়া এতো সহজ ! ! ?
ভুল ভাবছ, ওসব হবে টবে না তোমাদের দ্বারা ।তোমরা রমণীকুল পুরোপুরি সংসার ধর্ম করবে, কেউ কেউ চাকরী করবে আবার লিখালিখিও করবে ! ! ?? দুই নৌকায় পা দিয়ে নদী পার হওয়া বড় কঠিন ,সেখানে তোমরা দিতে চাইছো তিন নৌকায় পা ??! !
বলি হে রমনী, তোমার ঠ্যাং তো দুখানাই ! ! অতএব লেখিকা হবার ওসব স্বপ্ন-টপ্ন বাদ দাও,
বা – লি -কে।।”