সওদাগর

সোমা নায়ক (যাদবপুর, কলকাতা)

তুমি আমাকে বোঝো, হয়তো আমার চেয়েও একটু বেশিই বোঝো, এই ভাবনাটা আমাকে মনে মনে বেশ তৃপ্তি দেয়,জানো।

তোমার কথায়, তোমার চিন্তায়-ভাবনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখার মধ্যে কি যে এক অলীক আনন্দ, অপরিসীম সুখ, তা যদি তুমি বুঝতে সওদাগর!

তোমাকে নিয়ে যে আমার গর্বের কোনো শেষ নেই, তুমি ছাড়া যে আমার চাওয়ারও তেমন বিশেষ কিছু নেই আর, সেই কথাটা আমি কাকে বোঝাই বোলো? অন্যের কথা তো বাদই দাও। তুমি নিজেই কি আর বোঝো? বোঝো কি? বলো…

অথচ জানো তো, আমার না খুব ইচ্ছে করে, তোমায় ঘিরে, হৃদয়ের অন্তঃস্থলে প্রাণ ভোমরার মতো আগলে রাখা এই যে বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো, তোমাকে নিয়ে এই যে আমার নিজস্ব যত আহ্লাদী সুখ, শান্তি, আদিখ্যেতা, সব… সমস্তটা গিয়ে জনে জনে চিৎকার করে জানাই। অন্তত একবার মুখ ফুটে বলি, তুমি আমার কাছে ঠিক কি, কতটা বিশেষ।

শুনতে হয়তো খুব বোকা বোকা লাগবে, তবে একথা একদম সত্যি, আমারও খুব ইচ্ছে করে, অন্যান্য কাছের মানুষদের কাছে তোমাকে নিয়ে একটু গল্প করি। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ুক তোমার আর আমার প্রেম কাহিনীর কথা, অমর প্রেম কাহিনী। সবাই অবাক হয়ে দেখুক, বুঝুক আর মনে মনে ভাবুক, এভাবেও ভালোবাসা যায়! কি আশ্চর্য…

এখানে এখন হেমন্ত। তোমার ওখানে? ভাবছো তো, এ আবার কেমন প্রশ্ন! আসলে তুমিই তো সবসময় বলো, জীবন মানে তো চড়াই উৎরাই থাকবেই। তবে মন! মন যেন সবসময় বসন্তে আটকে থাকে।

আচ্ছা সওদাগর, এই যে আমি তোমার কাছে নেই, তুমি চাইলে আমায় ছুঁতে পারনা, জড়িয়ে ধরতে পারনা, এই যে সারাক্ষণ কেমন একটা অভাব অভাব অভ্যাসের অসুখ নিয়ে বাস করছো তুমি, তারপরও বলবে তো, তোমার জীবনে কেবল বসন্ত আর বসন্তই চলছে।

এ্যাই শোনো , তুমি আমায় একটা সত্যি কথা বলবে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আমার এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি তোমাকে খুব একটা ভাবায়? ভাবায় তো? আমার অভাব তুমি আদৌ অনুভব করো?

আজকাল এই পোড়া মনটাকে নিয়ে যে আর পারা যায় না গো! সারাটাক্ষণ কেমন যেন একটা তুমি তুমি ভাবনাতে বুঁদ হয়ে থাকে। অথচ চোখ চেয়ে দেখলেই, বুঝতে পারি খুব, তুমি কেমন আস্তে আস্তে একটু একটু করে করে দূরের মানুষ হয়ে যাচ্ছো। চাইলে আর তোমাকে আমার বলে জোর করতে পারি না। ‘তুমি আমার’ বলতেই পারি না একথা।

একটা সময় কি ভীষণ ইচ্ছে করতো জানো, আমাদের কথা অন্যমুখে শুনে, লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া আমি তোমার অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে থাকি। সেসব অবশ্য এখনও ইচ্ছে করে।

ইচ্ছে তো করে কেবল তোমার কথা ভেবেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা একটু ঠিক করে নিই, কাজলটা একটু এঁকে নিই যত্নে। পছন্দের রং, পছন্দের পোশাক, সব একদম বুকে ধরে আগলে রাখি সুখে। ঠিক তুমি যেভাবে আমাকে দেখতে চাও… দেখতে চাইতে, সেভাবেই যেন সবসময় নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি। কি জানি, না বলে কয়ে কখন হঠাৎ সামনে এসে হাজির হন মহারাজ।

এখন এভাবেই দিন কাটছে। এভাবেই সময় বইছে ধীরে। ঝরে পড়ছে বালি, গলে পড়ছে জল। অথচ অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না। কল্পনায় ঘর বাঁধছি রোজ আর বাস্তব এসে সত্যের আয়না ধরছে মুখে।

ভালোবাসায় এমন নিঃস্ব হতে আর কখনো কাউকে তুমি দেখেছ? সওদাগর

এটুকুই… ব্যাস শুধু এটুকুই।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )