জীবনের উপকথা

সঙ্গীতা মুখার্জী মণ্ডল (দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান)

 ফেসবুক থেকে পরিচয় হয় তনয় ও সাথীর। দুজনেই বিবাহিত হলেও ওদের বিবাহিত জীবন খুব একটা সুখের ছিলো না। তনয় আর সাথে সাথীর অবাধ মেলামেশা থেকে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু সাথী এসব সম্পর্কের ব্যাপারে একদম সিরিয়াস ছিলো না। কারণ তনয় এর আগেও সে অনেক পুরুষের সান্নিধ্যে এসেছে। কয়েক মাস গেলে তনয় তাকে নিজের কাছে রাখতে চায় অর্থাৎ বিয়ে করে মায়ের কাছে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বন্দী জীবনে ছিলো সাথীর আপত্তি। সাথীর হঠাৎ করেই তনয় কে সব দিক থেকে ব্লক করে, ও মুভ অন করে যায়।

 তনয় ভীষন কষ্ট পায় । ঠিক সেই সময় তনয়ের জীবনে বান্ধবীর রূপে আসে এক সরল সাধাসিধে  গৃহবধূ  রিয়া। তাকে বোঝায় এবং আশ্বাস দেয় তনয় দেখিস তোর সাথী যদি তোকে ভালোবেসে থাকে ঠিক ফিরবে ! কিন্তু না সাথী আর ফেরে নি।

 দিন যায় তনয় ও রিয়ার বন্ধুত্বে দায়িত্ব বাড়তে থাকে। তনয় ঘরোয়া রিয়াকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় , তার সাংসারিক জীবনের কথা শুনে তার লোভ হয় ।ঠিক এমনি একটা মেয়ে তো আমার দরকার ছিলো, যে আমার খেয়াল রাখবে, আমাকে ভালবাসবে। হঠাতই একদিন রিয়াকে সে বলে ফেলে রিয়াকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। রিয়া তো আকাশ থেকে পড়ে। রিয়া বলে ছি ছি এ কথা শোনা ও পাপ, কারণ সে অসুস্থ একটা বিবাহিত জীবনে থাকলেও সে কোনোদিন পারবে না অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়াতে।

রিয়া আসতে আসতে কথা বলা কমিয়ে দেয় তনয়ের সাথে। কিন্তু ব্যাপার হলো ওরা যে সারাদিন কথা বলতো , একে অপরের সমস্ত কথা শেয়ার করত।রিয়ারও ভীষন একা লাগছিলো। কেমন যেনো মনকেমনের মেঘ দেখা দিচ্ছিল। বার বার তনয় ধরা দিচ্ছিলো। ভালোবাসা কোনো পাপ নয় রিয়া। তোমার বর ড্রিংক করে অত্যাচার করে তবুও তার হয়েই থাকতে হবে এ কথা কে বলেছ?


 রিয়াকে তনয় স্বপ্ন দেখাতে থাকে , রিয়ার মা বাবার সাথে কথা বলবে বলে। মাঝে মধ্যে তনয় নিজের মায়ের সাথে রিয়ার কথা বলিয়ে দেয় আবার দেখা করায়।তনয়ের মা রিয়ার হাত দুটো ধরে বলে তুমি আমার ছেলে কে দেখো মা। না হলে যে আমি মরেও শান্তি পাব না। 

যত দিন যায় রিয়া ও তনয় ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়।অবশেষে তনয় রিয়াকে প্রেশার দিতে থাকে তার কাছে থাকার জন্য। রিয়া বলে সমাজ কি বলবে? আমরা দুজনেই বিবাহিত। আমাদের সংসার আছে কিছু দায়িত্ব আছে ।সব থেকে বড় কথা আমরা কারো না করো মা এবং বাবা।

 তনয় সেক্স চুয়েল প্রবলেমে ভুগতো। তনয়ের জীবনে যখন ফিনান্সিয়াল প্রবলেম দেখা দেয় তখন রিয়া তাকে কিছু গয়না অফার করে, কারণ রিয়ার কোনো রোজগার ছিলো না। তনয়ের চোখ ভরে আসে , কিন্তু গয়না নিতে পারে না। তনয় রিয়াকে বলে এটা কজন বলতে পারে বলো? এই জন্যই তুমি আমার কাছে অনন্যা।

  মাস চারেক পর হঠাৎ তনয় আসতে আসতে রিয়াকে এড়িয়ে যেতে থাকে। রিয়া এর কারণ বুঝতে পারে না।রিয়া কল করলেই বলে ব্যাস্ত আছি। রিয়ার কষ্ট হয়।

  বেশ কিছুদিন পর একটি গ্রুপে দেখতে পায় তনয় জয়ন্তী নামে একটি মেয়ের সাথে প্রেম করে একদম খুল্লোম খোলা। রিয়ার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। বিশ্বাস করতে পারছে না সে এটাও সম্ভব! 

   হম সম্ভব! রিয়া জানতে পারে তনয় জয়ন্তী কে ভালোবাসে। কারণ তাকে সে ইচ্ছে মতন পেয়েছে। সে তাকে সংসার ছেড়ে বিয়েও করবে।

  রিয়া সরে আসে চিরতরে, রিয়ার জীবনের দ্বিতীয় ভুল সে করেই ফেলেছে বুঝতে পারে। এবং এবার সে ঠিক করে নিজেকে প্রায়োরিটি দিলে নিজেকে ভালোবাসলে এতোটা বাইরের মানুষদের থেকে হতো প্রতারণা আসতো না। মানুষের দুর্বলতা হলো ভয়ানক এক রোগ। কিছু মানুষ সমাজে আছে যারা সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করে। মানুষ দুর থেকেই সুন্দর।তাই মানুষ কে দুর থেকে দেখা দরকার। ভালোবাসা নিছক এক কল্পনা।

  বছর খানেক যেতে না যেতেই রিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে। কারণ সে যে ভালো লিখতো। সে বিশ্ব বাংলা একাডেমি পুরস্কার পায়।

  ঠিক তখন তনয় ফিরে আসে এবং ক্ষমা চায় রিয়ার কাছে। কিন্তু রিয়ার তখন কোনো অনুভূতি নেই।রিয়া বলে আমি  তো মানুষ তাই ক্ষমা করতে জানি। বহু আগেই তাই ক্ষমা করে দিয়েছি তোমায়।
CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )