দূরত্ব প্রেম

উপমা কুন্ডু (বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ)

এ শহর আমাদের চেনেনি!
এ শহর আমাদের চিনতে চেয়েও ভুলে গেছে বারম্বার।
এ শহর ই করিয়েছে দেখা, দেখিয়েছে স্বপ্ন,
গড়িয়েছে আলাপ… তবু মিলতে দেয়নি কখনো।
শহরের বুক চিরে বইছে যে পবিত্র গঙ্গা,
কৃষ্ণচূড়া ঝড়িয়ে, সেই দিয়েছে ভালোবাসার সংজ্ঞা,
সেই আঁচল পেতে বসতে দিয়েছে,
মুষল বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিয়েছে,
সাইকেলের চাকায় চাকায়, গড়িয়েছে প্রেম,
চোখে চোখ রেখে বন্ধ থেকেছে ঘড়ি।
তবু এ শহর আমাদের মনে রাখেনি।
এ শহর আমাদের গোলাপ চেনায়নি,
কাঁটা টুকুর হদিস বুঝিয়েছে, পদ্মের পাক চিনিয়েছে,
দেখিয়েছে, এ কঠিন পৃথিবীর কট্টর মুচকি হাসি!
এ শহরে পুজো হয়েছে তেরো পার্বণে ,
বছর বছর শহর মেতেছে উৎসবে।
তবু এ শহর আমাদের আমন্ত্রণ পাঠায়নি,
উৎসবে কখনো বাঁধতে চায়নি।
কখনো তপ্ত সকালে, বা ভরা দুপুরে,
কখনো মেঘের গর্জনে বা উশৃঙ্খল বিকেলে
ক্ষণিকের দেখা করিয়েছে, কিন্তু চিনতে দেয়নি।
এ সম্পর্ক এগিয়েছে বেতার সংযোগে,
কথা ভেসে বেড়িয়েছে, অনুভূতি দিক চিনিয়েছে,
এ শহর ঠিকানা হয়ে পাশে দাঁড়ায়নি।
ক্ষণিকের আলাপ শেষ করে ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে বহুবার,
তবু, এ শহর আমাদের আটকে রাখেনি ,
আফসোস,এ শহর, মণ পড়তে শেখেনি….

এ শহর আমাকে একা ছাড়ার সাহস পায়নি,
তাই,
তার গ্রাম ও আমাদের চেনার সূযোগ পায়নি,
ও গ্রাম বারবার বাস পাঠিয়েছে,
কিন্তু এ শহর তাকে বাস স্টপ এ থামিয়ে রাখতে পারেনি।
রোজ ই সে গ্রামে, হয়েছে সূর্যোদয়,
তবু, আমাদের জন্য সকাল হয়নি।
রোজ ই আঁধার নেমেছে সূর্যাস্তে,
তবু প্রেমে জোয়ার আসতে দেয়নি।
আর আমরাও ভাটা পড়তে দিইনি।
গ্রাম – শহরের মনোমালিন্যে আমাদের দূরত্ব বেড়েছে,
তবু দুরভাসের যান্ত্রিকতায়, প্রেম জমেছে ,
শহর চিনতে পারেনি, গ্রাম চিনতে চায়নি,
নদী বেশিদিন আঁচল পেতে রাখেনি,
কৃষ্ণচূড়া ও আর ঝোড়ো হওয়ার আরাম পায়নি,
তবু সময় থেমে থাকেনি…
জীবন কঠিন হয়েছে, তবু মুখের হাসি টা মলিন হয়নি,
বাঁচা টা challenging হয়েছে, কিন্তু কেও হাত ছাড়েনি।
অন্য কোনো শহর নিশ্চই পাঠাবে ডাক,
কেও নিশ্চই কখনো জানতে চাইবে আমাদের,
একদিন নিশ্চই আমাদের দেখা হবে,
ঘরে ফেরার ঠিকানা টাও একদিন ঠিকই এক হবে,
সেদিন ঘুচে যাবে এ দূরত্ব প্রেম।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )