অবসর নিলেন বাঁকুড়ার জনপ্রিয় শিক্ষক

অবসর নিলেন বাঁকুড়ার জনপ্রিয় শিক্ষক

সৌমী মন্ডল, বাঁকুড়া-: দু'পাশে তখন অসংখ্য বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের ভিড়। প্রিয় শিক্ষককে ছাড়তে কারও মন চাইছিলনা। হয়তো তিনি নিজেও যেতে চাইছিলেননা। কিন্তু সরকারী নিয়ম মেনে তো যেতেই হবে! তাই চোখের জল ও অসংখ্য মানুষের ভালবাসাকে সম্বল করে শেষবারের মত বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় সই করলেন বাঁকুড়ার সারেঙ্গার নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক 'শিক্ষারত্ন' তথা সকলের প্রিয় 'বাঘ মাষ্টার' সাধন মণ্ডল। সঙ্গে সঙ্গে গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি তার দীর্ঘ বর্ণময় শিক্ষকতা জীবনের অবসান ঘটল। মাঝে কয়েকটা বছর অন্য বিদ্যালয়ে কাটলেও শুরু ও শেষ একই বিদ্যালয় থেকে ঘটল। তার হাত ধরেই জঙ্গল মহলের প্রত্যন্ত গ্রামের এই বিদ্যালয়টি 'নির্মল বিদ্যালয়' পূরস্কার লাভ করে। পরে প্রায় সমগ্র গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে সাধন বাবুকে রাজকীয় বিদায় সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (সারেঙ্গা) সোনালী মুর্মু, বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক সন্দীপ কুমার মালিক, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক সঞ্জীব দাস চক্রবর্তী, সাধন বাবুর বৃদ্ধ মা চাঁপারানী মন্ডল সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সত্যকিঙ্কর পন্ডা। সোনালী দেবী বলেন, আমার চাকরি জীবনে সাধন বাবুর মত প্রাণোচ্ছ্বল শিক্ষক আমি খুব কম দেখেছি। উনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাতে কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়। বিদ্যালয় ছিল উনার কাছে মন্দির স্বরপ। মন্দিরের দেবতা হলো তার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা। অন্যদিকে সন্দীপ বাবুর বিশ্বাস, সরকারী নিয়ম মেনে বিদ্যালয় অন্ত প্রাণ মানুষটি অবসর নিলেন ঠিকই কিন্তু উনি বাড়িতে বসে থাকতে পারবেন না। উনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসবেন এবং আগের মতই প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করবেন। সঞ্জীব বাবু বলেন, সাধন বাবু শুধু একজন শিক্ষক নন, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাংবাদিকও বটেন। তাইতো তামাক বিরোধী আন্দোলনেও তাকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সাধন বাবু সম্পর্কে তাদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করেন। অন্যদিকে চোখের জল লুকিয়ে 'বিদায়ী' প্রধান শিক্ষক সাধন বাবু বলেন, এই ছাত্রছাত্রীরাই আমার প্রাণভোমরা। এদের ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে কার্যত অসম্ভব। এদের সঙ্গেই আমি আমৃত্যু কাটাতে চাই। সরকারী নিয়মে অবসর নিলেও আবার আগের মত নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসব। তাদের প্রিয় 'বাঘ মাষ্টার'-এর এই ঘোষণায় খুশির রেশ দেখা যায় বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মুখে। ওদিকে অনুষ্ঠান মঞ্চে বসে থাকা সন্তানের গর্বে গরবিত সাধন বাবুর বৃদ্ধ মা চাঁপারানী দেবীর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে আনন্দাশ্রু।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )