প্রতিজ্ঞা
জয়া সান্যাল (কলকাতা)

মা আদর করে নাম দিয়েছে আহ্লাদী
তবে কতটা আহ্লাদ
ওর ভাগের পাওনা
ও,তা নিজেই জানে না, ভালো করে।
ও, যেদিন জন্মেছিল
সেদিন ফুঁ পড়ে নি শাঁখে
উলুধ্বনিও দেয় নি কেউ।
ঠাকুমা মুখ ফিরিয়ে বলেছিল
প্রথম সন্তান তাও আবার মেয়েছেলে
দে নুড়ো জ্বেলে ।
মা, সেদিন মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলো
অন্ধকার ঘুপচি আঁতুড়ঘরে
প্রথম মা হওয়ার আনন্দটাও
মেঘের আড়ালে
চাঁদ কে ঢেকে দিয়েছিলো।
আহ্লাদীর শৈশব কাটলো
মায়ের আঁচলের ছায়ায় ছায়ায়
কৈশোর আসতেই
ঠাকুমা বললো
ঐ ডাগর মেয়ে , ওকে আর
ঘরে রাখা যায়না
ছেলে দেখে বিয়ে দে।
একটা পাত্র জোগাড় করলো, বাপটা
পাশের পাড়ায়
ভ্যান চালায়।
দেনা পাওনা মিটিয়ে
দিয়ে দিলো বিয়ে
সেদিন আহ্লাদীর ভাগের আহ্লাদের
হিসাব কষা আর হলো না।
মা লুকিয়ে আবার চোখের জল ফেলেছিলো
কিন্তু তার খোঁজ
রাখেনি কেউই।
আহ্লাদী শ্বশুরবাড়ি গেলো
কৈশোরের পতুল, খেলার মাঠ
দু মুঠো ভাত পাওয়া ইস্কুল
সব পিছনে ফেলে।
টানাটানির সংসারে
শাশুড়ি পাঠালো
বাবুর বাড়িতে ঘর মোছা আর
বাসন মাজার কাজে।
আহ্লাদীর পেটে তখন
একটা নতুন প্রাণের ধুকপুক শব্দ।
সারাদিনের কাজের শেষে
এলিয়ে পড়া শরীর
ক্রমশঃ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণকায়।
প্রতিটি রাত তাকে
ভাবতে বাধ্য করে
ওর পেটেও কোন আহ্লাদী
বেড়ে উঠছে না তো??
আহ্লাদী মনে মনে প্রস্তুতি নেয়
মাতৃত্বের লড়াই করার
ওর প্রথম সন্তান মেয়ে হলে
সে লুকিয়ে ফেলবে না আর চোখের জল
মেঘ সড়িয়ে আলোর স্বপ্ন দেখে সে।
ওর মতো ওর আহ্লাদীর
আহ্লাদের ভাগ বসাতে দেবে না কাউকে
ঢাল হয়ে দাঁড়াবে সে।
ওর আহ্লাদী ইস্কুলে যাবে
মাথা উঁচু করে
সগর্বে বলবে,
আমার মায়ের নাম আহ্লাদী
আমি একজন সফল শিক্ষিকা
এই সমাজ টা কে শিক্ষিত করব
এই আমার ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা।