মেয়ে তাই আড়ালে থাক!
সুদীপ্ত সেন (পাইকর, বীরভূম)

একটা পুতুল খেলার ছোটবেলা। পুতুলের চুলে বেনুনি করানো, পুতুলকে ঘুম পাড়ানো, সইয়ের পতুুলের সাথে নিজের পুতুলের বিয়ে দেওয়া, ঝড়ের রাতের আম ভোরবেলাতে কুড়নো, পড়াশোনা করে কী হবে? এর চেয়ে ঘরের কাজ শেখা, কিংবা খুব টেনেটুনে এইট পাশ করে বা কোনও ক্রমে মাধ্যমিক পাশ করে, কম বয়সে প্রেম করে বা পালিয়ে বিয়ে করে সংসারের বোঝা টানতে টানতে আজ যারা ৫০ কিংবা ৫৫ ছুঁয়ে ফেললেন। আজ তাদের চোখে আঙুল দিয়ে স্বপ্নভঙ্গের কথা উপলব্ধি করালেন সুনীতা।
বেশি পড়াশোনা করে কী করবি? খুব মেরেকেটে কোনও রকমে স্নাতক হলেই হল। তারপর সেই মেয়েটির ইচ্ছের কথা না জেনেই যে বাবা-মা মেয়েটিকে নিজেদের পছন্দ মতো ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। নিজেদের মেয়ের স্বপ্ন বলিকাঠ সেজে বলি দিয়েছেন এবং নাতি-নাতনীদের নিয়ে খেলার স্বপ্ন দেখছেন আজ তাদের (সেই অভিভাবকদের) গালে সপাটে চড় মেরেছেন সুনীতা।
মেয়েদের প্রতি ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে, ঝুঁকি থেকে সরিয়ে নিয়ে আড়ালে বড় করছেন যারা, আতুপাতু করে রাখছেন যারা, যারা শুরু থেকেই ধরে নিচ্ছেন আপনার মেয়ে পারবে না। অথচ ছেলে হলে পারত, সেই ভাবনাকে ধ্বংস করে দিলেন সুনীতা।
বারবার ভেঙে যাওয়া স্বপ্নেরা, ক্ষত ঝেড়ে উঠে দাঁড়ান মনেরা, ক্ষতবিক্ষত ইচ্ছেরা, বিয়েই শেষ কথা নয় বরং নিজের ইচ্ছেকে ডানা দিতে চাওয়া মেয়েরা, এমনকি সমাজ-আত্মীয়দের উর্দ্ধে গিয়ে যে অভিভাবকেরা নিজেদের কন্যা সন্তানকে তফাৎ না করে দুটো ডানা দিয়ে বলেছেন 'তুমি ওড়ো' তাদের সকলের কাছে আজ সুনীতা উইলিয়ামস যেন ঘন কালো এক মেঘলা আকাশে ঝলমল করে ওঠা রামধনু।