আজও খুঁজি তোমাকে
লিপিমিতা তনুশ্রী (কলকাতা)

আজও খুঁজি হাজার আলো তারার মাঝে
কোন তারাটা তুমি হলে ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়ে,
আজও তোমার কথার স্বর প্রতিধ্বনি হৃদয়-মাঝে
হঠাৎ করে উঠল ঝড় হঠাৎ করেই ছন্দপতন
টেলিফোনের সেই রিংটা খাঁ খাঁ স্বরে বাজল যখন,
মনে ভাবলাম ভুল শুনলাম, হতে পারে না এমনটা
গতকালও কথা হলো, দিব্যি ছিল সে স্বরটা।
তবে কেন এমন করে ঘনিয়ে এলো কালো মেঘ
বজ্র নিনাদ শঙ্কাবহ ছুঁড়ে ফেললাম মোবাইলটা।
তবে কি তা সত্যি হলো, সেদিন ভোরে দেখা স্বপন
ভাবিনি তো এমনভাবে সত্যি হবে, ছেড়ে যাবে প্রিয়জন—
বাবা, আমার যাচ্ছে চলে ফুলের রথে সেজেগুজে
হাসতে হাসতে আলোকছটা ছড়িয়ে গেল যাওয়ার পথে।
হঠাৎ করেই ঘুম ভাঙল— একি স্বপন ঘুমঘোরে
বুকের মধ্যে দলা পাকানো কান্না যেন আসে ঠেলে
এমনতর কেন দেখা! মঙ্গল না অমঙ্গলের বোঝে না মন
মানে না বারণ, খোঁজে নয়ন প্রিয়জনের দেখা পেতে ।
কোথায় আমি, কোথায় তুমি পথের ফারাক বিস্তর নিয়ম বাঁধার রশি কেটে মন যেতে চায় সত্ত্বর।
স্বপ্নঘোর কাটিয়ে তখন হাতে নিই মোবাইলটা
ওপার থেকে শুনতে পাই— বাবার গলার সে কণ্ঠস্বর —
“কি হয়েছে ? কেমন আছিস?
এত ভোরে হঠাৎ কেন ফোন করলি
আছে সব ঠিক, সবাই ভালো তো?”
যাক্, তবুও ধড়ে এলো প্রাণ, পেলাম সে স্বর,
মা বললে, ভাবিস না তুই, দীর্ঘদিন দেখা হয়নি
তাই এমন উচাটন দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনা
অজানা কোনো আশঙ্কা ;
মনের মধ্যে কু ডাকছে সময় শুধু বয়ে চলেছে
বেশ কিছুদিন ভুলেই গেলাম সেই স্বপ্নের কথা।
সেদিন কেন আবার তবে সেই স্বপনই সত্যি হয়ে
নিলো কেড়ে বনস্পতি বটের ছায়া!
হে ঈশ্বর, হে ভগবান, এও আমাদের বিধিলিপি
এমনদিনে চিরজীবনের ছাড়াছাড়ি
আমরা হবো পিতৃহারা আর তুমি হবে ওই আকাশের তারা।।
আজও প্রতিমুহূর্তে তোমাকে খুঁজি বাবা। বাড়ি গেলে প্রতিটি কোণায় কোণায় এখনো তোমার স্পর্শ অনুভব করি। এখনো খাবার থালায় তোমার শব্দকথা খুঁজি। এত উৎসব, আলো, সফলতা সবই তোমার আশীর্বাদ বাবা, শুধু মনের মধ্যে হাজারগুণ কষ্ট একসাথে ডুকরে কেঁদে ওঠে — এতকিছুর মধ্যে তোমাকে পাশে না পাওয়ার, তোমার স্পর্শ না পাওয়ার দুঃখবেদনাগুলো একসাথে ভিড় জমায় মাথার ভিতর, মনের ভিতর।
“নয়ন-সমুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।”
তোমার আশীর্বাদী হাতটা আর মাথা স্পর্শ করে না, শুধু অনুভবে অনুভবে তোমাকে ছুঁয়ে যাই। তোমার আদর্শ মাথায় নিয়ে আজও ঈশ্বরের সামনে জোড়হাতে সবার মঙ্গল কামনা করি, তুমিই তো বলেছিলে, এমনভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাতে, কেননা সেই সবার মধ্যে আমিও আছি যে। দীর্ঘ চারবছর হয়ে গেল তুমি নেই সম্মুখে সশরীরে, তোমার পা ছুঁয়ে প্রনাম করতে পারি না, শুধু তোমার ছবির সামনে নত হয়ে চোখের জলে ঝাপসা হয় মুহুর্তরা। সময়ের প্রলেপ অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়, কিন্তু সত্যি কি ভোলা যায়! মনের স্তরে স্তরে জমা স্মৃতিধূসর ধুলো চোখে এসে পড়ে, বাঁধ মানে না অশ্রু-নয়ন।
বাবা, তুমি যেখানেই থাকো ভালো থাকো, আশীর্বাদী হাতটা রেখো, আমাদের সাথে থেকো।