দুঃসময়

সবিতাব্রত লাহা (গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান)

মনটা একদম ভালো নেই।
বড়ো দুঃসময়ের মধ্যে চলেছি।
আরো কত দিন এভাবে কে জানে!

আমাদের ছেলেবেলা এমনটা ছিলো না।
আমাদের শৈশব, কৈশোর, বড়োবেলা।

কাকডাকা ভোরে ঘুম ভেঙে যেত।
এবাড়ির বারান্দায়,
বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয়,
ও বাড়ির জানালায়-
শরৎচন্দ্রের রামের সুমতি।
তার পর এক আকাশ রোদ্দুর।
বিদ্যালয় থেকে উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়।
টিফিনের ঘন্টা- কলেজ পালানো –
শত সহস্র হীরে, মতি, চুনির ঝলকানি।
তারপর আদি অকৃত্রিম জীবন সংগ্রাম।
একসময় চুঁইয়ে পড়া চাঁদের আলোয়
নিরলস প্রশান্তির মন ভালো করা ঘুম।

এখন কাক ডাকা ভোর উধাও।
সারা রাত শুধু ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ।

অনুভূতি, আবেগ-
শৈশব, কৈশোর, যৌবন –
সর্বাঙ্গে সোশাল মিডিয়া আষ্টেপৃষ্টে।
ঘুম ভাঙে মোবাইলের এলার্মে –
বেলা গড়িয়ে তখন দুপুর।

মনটা একদম ভালো নেই।
চারদিকে শুধু হাহাকার, আতংক।
দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়।
আমি নিরাপদ তো? আমরা?

আমাদের ছেলেবেলা এমনতো ছিলো না।
শুধু জানতাম পিছিয়ে পড়া চলবে না।
এখন সরল মতি বালকেরা পড়ে না।
পড়তে চায় না।
যে বয়সে ফুটফুটে বালিকা আলপনা দেবে, ভরতনাট্যম শিখবে-
যে বয়সে মেধাবী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় প্রথম হবার আনন্দে উল্লসিত হবে-
সে বয়সে ওরা রিলস বানায়।
নাচ শেখে না।কিন্তু নাচে।
ইউটিউবে পোস্ট করে।
অসভ্যতা করে।

মনটা একদম ভালো নেই।
যুবকেরা মাঠে যায় না।
নিজেরা খেলে না।
খেলা দেখে। আর –
ড্রিম ইলেভেন খেলে।

তরুণ প্রজন্ম বই কেনে না।
গল্প, উপন্যাস, ভ্রমন কাহিনি।

শুধু ভিউজ দেখে-
ওয়ান কে, হান্ড্রেড কে, থাউজ্যান্ড কে।
চ্যানেল মনিটাইজড! ওয়াও।

সবটুকু দোষ ওদের ও নয়।
ওরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
ওরা নেতিবাচক অবিমৃষ্যকারী।
ওরা পরিস্থিতির নিষ্ঠুরতম শিকার।

এ দায় আমাদের সবার।
এ দায় আমাদের সিস্টেমের।

আসুন,আমরা সবাই পথ দেখাই।
একসাথে বলি –
“মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে।”

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )