
দেন্দুয়ার যানজট মুক্তির লক্ষ্যে সালানপুরে গুরুত্বপূর্ণ সভা: ইসিএলকে এক সপ্তাহের সময়সীমা
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
আসানসোল-চিত্তরঞ্জন সড়কের দেন্দুয়া মোড়ে দীর্ঘদিনের যানজটের জটিল সমস্যা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে আজ সালানপুর বিডিও কার্যালয়ে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সালানপুরের বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল), স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গণ্যমান্য প্রতিনিধিরা, যারা এই জনদুর্ভোগ নিরসনে সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।সভায় অংশ নেন ইসিএল বনজেমারির প্রতিনিধি দীনেশ প্রসাদ, কোলিয়ারির নিরাপত্তা আধিকারিক, পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান, সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৈলাশপতি মন্ডল, উপ সভাপতি বিদ্যুৎ মিশ্র, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুকুল উপাধ্যায়,সালানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অমিত কুমার হাটি, কুলটি ট্রাফিকের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সৌরভ চৌধুরী, কল্যাণেশ্বরী ফাঁড়ির ইনচার্জ লাল্টু পাখিরা, সালানপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের উপ-সভাপতি ভোলা সিং, দেন্দুয়া পঞ্চায়েত প্রধান সুপ্রকাশ মাজি এবং সালানপুর পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি ফুচু বাউরি।
মুকুল উপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে দেন্দুয়ার যানজটকে সালানপুর ব্লকের সবচেয়ে জ্বলন্ত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, এর স্থায়ী নিরসন ছাড়া সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। বিস্তারিত আলোচনায় উঠে আসে যে, ইসিএলের কয়লা পরিবহনকারী ভারী ডাম্পার, ট্রাক এবং ট্রেলারের অবিরাম চলাচলই এই মোড়ে যানজটের মূল কারণ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সভায় বেশ কয়েকটি কার্যকর প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রশাসনের তরফে ইসিএলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, কয়লা পরিবহন রাত ৯টা থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। দিনের বেলায়,সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভারী যানবাহনের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে,এবং এই নিয়ম কঠোর ভাবে পালন করবে ট্রাফিক পুলিশ। পাশাপাশি,দেন্দুয়া শিল্পাঞ্চলের দুটি প্রধান কারখানার মালবাহী ট্রাক গুলিকে কল্যাণেশ্বরী হয়ে জাতীয় সড়কে পুনর্নির্দেশিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।মুকুল উপাধ্যায় একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান হিসেবে ইসিএলকে একটি বিকল্প পথ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ধুন্দাবাদ মোড় থেকে খুদিকা হয়ে মেলেকোলা এলাকার জাতীয় সড়ক পর্যন্ত একটি নিজস্ব রাস্তা তৈরি করা হলে ডালমিয়া সাইডিংয়ে কয়লা পরিবহনের জন্য দেন্দুয়া মোড়ের উপর কোনো চাপ পড়বে না।এই প্রস্তাব সভায় উপস্থিত সকলের সমর্থন লাভ করে, কারণ দেন্দুয়ার ক্রমবর্ধমান যানজট স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সভায় ইসিএলকে এক সপ্তাহের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে এই পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উভয় স্তর থেকে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, এই সময়ের পর দিনের বেলায় কয়লাবাহী যানবাহনের চলাচল কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ইসিএলের প্রতিনিধি দীনেশ প্রসাদ উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন, দিনের বেলায় পরিবহন বন্ধ হলে কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি হতে পারে। বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে জন সাধারণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন।
আলোচনায় প্রকাশ পায় যে, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি কয়লাবাহী ডাম্পার দেন্দুয়া মোড় অতিক্রম করে। চলতি আর্থিক বছরে ইসিএলের কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় এই সংখ্যা হাজার ছুঁতে পারে। এত বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চাপ আসানসোল-চিত্তরঞ্জন সড়কের জন্য অসহনীয়। বনজেমারির কেন্দ্রীয় সাইডিংয়ে বিভিন্ন কোলিয়ারির কয়লা জমা হওয়ায় এবং পরে তা অন্যত্র প্রেরণের কারণে এই যানজট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
মুকুল উপাধ্যায়সহ অন্যান্য প্রতিনিধিরা বিকল্প পথ নির্মাণের প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ইসিএলের উপর জোরালো চাপ প্রয়োগ করেন। তারা একবাক্যে বলেন, দেন্দুয়া মোড়কে আর যানজটের কবলে ফেলা যাবে না। মহম্মদ আরমান সভার ফলাফল নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই পরিকল্পনা অবশ্যই সফল করতে হবে। তিনি জানান, গতকাল পয়লা বৈশাখের একটি অনুষ্ঠানে রূপনারায়ণপুরে বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় এই সমস্যার সমাধানে তৎপরতার পরামর্শ দিয়েছেন।
ইসিএলের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে দেন্দুয়ার যানজট মুক্তির ভবিষ্যৎ। বিকল্প পথ নির্মাণের এই উদ্যোগ এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম ও স্বাভাবিক করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।