চিলেকোঠা

সুনন্দা হালদার (কলকাতা)

” নবীন সেও জীর্ণ হবে,
হারাবে রং হারাবে তার মায়া,
চোখের কোলে, মুখে রেখায়,
পড়বে ঢলে সেই পুরাতন ছায়া…”

 কনকাঞ্জলি দিয়ে বিদায়ের আগে সুতপা ছুটে গিয়েছিল চিলেকোঠার ঘরটায়।যেন বিদায় নিতে গিয়েছিল  কোন বন্ধুর কাছ থেকে। ওখানেই লুকানো ছিল তার মন ভালো করার জাদুকাঠি। ছোট থেকেই সকল হাসি, আনন্দ, দুঃখ সব অনুভূতির ভাগীদার ছিল এই ঘরখানা। ওখান থেকেই সে দেখতো সূর্যাস্তের শোভা, দূরে সবুজের হাতছানি । আর দুচোখ ভরে দেখতো দিগন্তরেখা ও মাটির কানাকানি।

   কৃষ্ণচূড়ার লাল আগুন রাঙা প্রথম বসন্তে অরুণকে লেখা তার প্রথম  চিঠির অনুলিপি ছিল ওখানেই লুকানো।তার হাসি কান্নার প্রতিধ্বনি  ওই ঘরের দেওয়াল জুড়ে। ওই চিলেকোঠার ঘরটির সঙ্গে তার যেন এক বিনিসুতোর  বন্ধন।

  যাইহোক শ্বশুর বাড়িতে এসে প্রথমে খুব মন খারাপ হতো। কিন্তু এখানেও পেয়ে যায় চিলেকোঠার সান্নিধ্য। অভ্যাসমত এই ঘরটাও তার খুব আপন হয়ে ওঠে। তার সংসার জীবনের কত স্মৃতির সাক্ষী এই ঘরটি। গরম চায়ের উষ্ণতায় এখানে ভেঙে গেছে কত মান অভিমানের পালা। কেটেছে কত মন খারাপের বেলা। এখানেই গড়ে উঠেছে কত নতুন নতুন স্বপ্ন, ভাবনা, নতুন নতুন পরিকল্পনা। 

 আজ ওই চিলেকোঠার ঘরে বসেই সুতপা মনে মনে পুরনো দিনের কথা ভাবছিল। বেশ খুশির আবেশে ভরে উঠেছিল মন। হঠাৎ অরুণ খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে  জানালো তাদের এই দালান বাড়িটা ভেঙে এখানে তৈরি হবে মাল্টিপল কমপ্লেক্স। সুতপা যেন বজ্রাহত হল। সে ভাবতেই পারছে না প্রিয় ঘর খানা আর থাকবে না। বাড়ির সবাই মিলে প্ল্যানিং করছে কিভাবে নতুন ফ্ল্যাট সাজানো হবে। আর অন্যদিকে সুতপার চোখে জলের ধারা। তার মনের দেওয়াল জুড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে তার প্রাণপ্রিয় চিলেকোঠার প্রতিচ্ছবি।
CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )