মানব ধর্মেই মানুষ বাঁচে

সুজান মিঠি (জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান)

একটা আকাশ, একটা মাটি, একটা জন্ম,
মৃত্যু হাজার খানেক…

এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভয়
গড়িয়ে যাচ্ছে লজ্জা
গা মিশিয়ে ঘৃণা ভাসছে বাতাসে…

ওই যে লোকটা সামনে দিয়ে হেঁটে গেল
ওর নাম রহিম
মাথায় টুপি, চিবুকে দাড়ি
ওর ওই দুটো চিহ্ন খুলে নিয়ে ওকে
পরিয়ে দেওয়া হোক উত্তরীয়, গেরুয়া বসন
হাতে তুলে দেওয়া হোক সংস্কৃত মন্ত্রের পুঁজি
দু এক খানা…
ওর নাম বদলে হয়ে যাবে রাম।
আবার কোর্ট, হ্যাটে, বুকের বামে ডানে হাত ঠেকিয়ে
প্রার্থনা করলেই ওই লোকটা হয়ে যাবে
জোসেফ…

এবার ওই লোকটার সব আভরণ খুলে ফেলে
ওকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হোক বিশেষ অপরাধে
ও হয়ে যাবে অপরাধী
ওকে সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হোক
ও হয়ে যাবে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক
ও হয়ে যাবে ক্রিকেটার
ও হয়ে যাবে গায়ক, নায়ক, শিল্পী।
ও হয়ে যাবে দেশের সম্পদ।
ওর গা থেকে মুছে যাবে সম্প্রদায়।

তবে কেন এত চাতুরী?
কেন কপট ছলনায় বিদ্বেষ বিষ?
কেন এত রক্তাক্ত পদ্মা?
কেন এত কান্না?
ঘর ভাঙা, মন ভাঙা, ধর্ম ভাঙার যন্ত্রণা?

পুরান কোরআন বাইবেল পাশাপাশি রেখে
চোখ রাখো বন্ধ করে…
পুরান ভাবুক দেবতা যদি, কোরান তখন বিমূর্ত,
মাতা মেরীর ক্রোড়ে যীশুর হাসি বাইবেলে।

কেন পাষন্ডদের চিৎকারে অসুর উঠছে জেগে?
কেন কান্নায় বুক ভেঙে ফেলছে হাসান, হোসেন,
হজরত মহম্মদ…
কেন ক্রুশে বিদ্ধ যীশু এক বুক আর্তনাদ নিয়ে
আশীষ দিয়ে যাচ্ছেন মানব কূলে…
‘হে ঈশ্বর এরা জানে না এরা কী করছে,
এদের তুমি ক্ষমা করো!’

কতদিন, আর কতদিন মানুষ তুমি ক্ষমা নিয়ে
এত অন্যায়ের পরেও বেঁচে থাকবে?
আর কতদিন সূর্যের চারিদিকে ঘুরবে পৃথিবী,
একেবারে সঠিক নিয়মে?

থেমে যাক! থেমে যাক!
থমকে যাক পৃথিবী একবার!
মন্দিরে মন্দিরে আজান এসে নামুক!
মসজিদে কৃষ্ণ রাধা।
ক্রুশ ছিন্ন করে যীশু দুহাত বাড়িয়ে কোলে
তুলে নিন সমগ্র পৃথিবী।

ঈশ্বর, আল্লাহ, গড মিশে এক হয়ে যাক
একদিন…
মূর্ত বিমূর্ত মিলে মরুভূমি করে দিক সব শরীর,
সব প্রাণ…
ক্ষুধা-তৃষ্ণার হাহাকার পড়ুক তপ্ত বালুকায়।

দেখব ওই একদিন কোথায় থাকে
লাঠি কুঠার আর সাম্প্রদায়িকতা!

খিদের কোনো সম্প্রদায় থাকে না, শুনছো বাংলা!
জলের কোনো সম্প্রদায় থাকে না, শুনছো বিদ্বেষ!
মানব ধর্মেই মানুষ বাঁচে!

মানব ধর্মেই মানুষ বাঁচে!

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )