
সালানপুরে ৩১ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ, মহিলা সংঘের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর থানায় প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় মহিলা সংঘের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী হিসেবে রয়েছে সালানপুর ব্লক প্রশাসন।অভিযুক্তরা হলো জিৎপুর উত্তররামপুর এলাকার “আদর্শ সংঘ মহিলা মাল্টিপারপাস সোসাইটি লিমিটেড” নামক সংগঠনের দুই কমিউনিটি সার্ভিস প্রোভাইডার, সংঘনেত্রী বাসন্তী সরেন এবং তাঁর সহযোগী রাসমণি বেসরা।
সালানপুর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) দেবাঞ্জন বিশ্বাস জানান, গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে এই সংঘকে দেওয়া অর্থ সম্পূর্ণরূপে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়ার পর এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। তিনি আরও বলেন,পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে।জানা গেছে, ২০১৭ সালে গঠিত এই মহিলা সংঘ ভারত সরকারের “জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন (এনআরএলএম) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩১ লক্ষ টাকা পেয়েছিল। এই অর্থ স্থানীয় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের আর্থিক উন্নতির জন্য বার্ষিক ৬ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে বিতরণ করার কথা ছিল। এছাড়াও, অতি দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু ব্লক মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের নিয়মিত অডিটে দেখা যায়, সংঘের ক্যাশবুক এবং ব্যাংক স্টেটমেন্টের মধ্যে কোনও মিল নেই। ২০২২ সালের স্ট্যাটুটরি অডিট রিপোর্টেও তহবিল ব্যবহারের কোনও সঠিক নথি পাওয়া যায়নি।বারবার তদন্তে তছরুপের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় চলতি মাসে বিডিও দেবাঞ্জন বিশ্বাস সালানপুর থানায় একটি মামলা (কেস নং – ৫৮/২৫) দায়ের করেন। পুলিশ বাসন্তী সরেন এবং রাসমণি বেসরার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, দরিদ্র মানুষের কল্যাণে সরকারের দেওয়া অর্থ আত্মসাৎ করার এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তরা তা প্রকৃত প্রাপকদের কাছে পৌঁছাতে না দিয়ে নিজেদের হাতে রেখেছেন বলে অভিযোগ। প্রশাসন এই ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং পুলিশের তদন্তের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ।উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর আগে আছড়া পঞ্চায়েত এলাকার একটি কমিউনিটি হলে এই বিষয় নিয়ে বৈঠকের সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তখন তছরুপের অভিযোগ উঠলেও বিষয়টি কিছুটা ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে এবার অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।