আসানসোলের রাজপথে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান: শোকের মুহূর্তে উস্কানির ছায়া

আসানসোলের রাজপথে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান: শোকের মুহূর্তে উস্কানির ছায়া

কৌশিক মুখার্জী: আসানসোল:- পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের রাজপথে উঠেছে এমন এক স্লোগান, যা দেশের হৃদয়ে শোকের মাঝেও তীব্র প্রশ্ন আর অস্বস্তির ঝড় তুলেছে। বৃহস্পতিবার, ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে কথিত ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এই ঘটনা যখন কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলার ক্ষত এখনও তাজা, তখন এই স্লোগান শুধু বিতর্কই নয়, গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন—এই উস্কানির উদ্দেশ্য কী? কেন এমন এক মুহূর্তে, যখন গোটা দেশ শোকে মুহ্যমান?

পহেলগাঁওয়ের হামলায় ২৬টি প্রাণ ঝরে গেছে, যার মধ্যে তিনজন বাংলার সন্তান। পর্যটকদের রক্তে রঞ্জিত বৈসরণের সেই দৃশ্য এখনও দেশবাসীর চোখে ভাসছে। এই হামলার পিছনে পাকিস্তানের যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছে, আর কেন্দ্রীয় সরকার কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটছে। এমন সময়ে, আসানসোলের রাস্তায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানের ভিডিও যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে মানুষ হাঁটছেন। সেখানে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ সঙ্গে ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই দুই স্লোগানের সহাবস্থান কি শুধুই কাকতালীয়, নাকি ইচ্ছাকৃত উস্কানি?

ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এই আইনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু আসানসোলের এই ঘটনা বিশেষভাবে নজর কেড়েছে, কারণ এটি শুধু আইনের প্রতিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি জাতীয়তার, একতার, আর সংবেদনশীলতার প্রশ্ন তুলেছে। যখন দেশ পহেলগাঁওয়ের শোকে মাথা নত করেছে, তখন এমন স্লোগান কেন? কারা এর পিছনে? এটি কি কেবল ক্ষোভের প্রকাশ, নাকি গভীর কোনো উদ্দেশ্যের অংশ?

সাধারণ মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো ঘুরছে। রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, এটি রাজ্যের শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিফলন। অন্যরা মনে করছেন, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে সম্প্রদায়গত বিভেদ সৃষ্টির চক্রান্ত। ভিডিওর সত্যতা এখনও যাচাই করা হয়নি, কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে গভীর। সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মানুষের মনে ক্ষোভ, ভয়, আর বিস্ময় মিশে গেছে।

এই ঘটনা শুধু আসানসোলের নয়, গোটা বাংলার, গোটা দেশের। এটি আমাদের সামনে তুলে ধরছে একটি কঠিন প্রশ্ন—আমরা কি এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যখন শোকের মুহূর্তেও বিভেদের সুর বেজে ওঠে? পহেলগাঁওয়ের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময়ে এমন স্লোগান কেন? এটি কি আমাদের ঐক্যের উপর আঘাত, নাকি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? 

বাংলার মাটিতে, যেখানে একদিন কবি নজরুলের কলম আর রবীন্দ্রনাথের সুরে মানবতার বাণী প্রতিধ্বনিত হয়েছিল, সেখানে আজ এমন স্লোগানের প্রতিধ্বনি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের সকলকে। কারণ, এটি শুধু একটি ভিডিও নয়, এটি আমাদের সমাজের, আমাদের দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। শোক আর ক্ষোভের এই মুহূর্তে, আমাদের প্রয়োজন ঐক্য, সংযম, আর সত্যের সন্ধান। কারণ, বাংলার মাটি বিভেদের নয়, ভালোবাসার; উস্কানির নয়, শান্তির।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )