আমি সংযুক্তা বলছি
সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

আপনাদের মনে আছে আমার কথা?
আমি কনৌজ রাজকুমারী সংযুক্তা, রূপে লাবণ্যে সর্বগুণে পারদর্শিনী
আমার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন বহু রাজপুত্র
তবুও একনিষ্ঠ ছিলাম একজনের প্রেমে,
না দেখা পুরুষের বীরত্বের কথা শুনে মনে মনে ভালোবেসে ছিলাম
অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম তাঁকে নিয়ে,
সে বীর আমার একান্ত প্রাণ পুরুষ স্বয়ং দিল্লিশ্বর পৃথ্বীরাজ,
সহস্র বাধা অতিক্রম করে তাঁর গলায় দিয়েছিলাম বরমাল্য
সেও আমারই ছিলো,
তাঁর হৃদয়ে পরিপূর্ণ ছিলো প্রেম, সাহসিকতা আর বিশ্বাস
সুখের ঘর বেঁধেছিলাম আমরা
দর্পণের সামনে দেখেছিলাম আনন্দ, তখন উল্টোদিকে অন্ধকার হয়ে দাঁড়িয়েছিল পৃথ্বীরাজের ক্ষমাশীল মন আর আমার পিতা জয়চন্দ্রের বিশ্বাসঘাতকতা!
তরাইনের প্রান্তর জানে
প্রথম যুদ্ধের পর যদি ক্ষমা না পেতো মোহাম্মদ ঘোরী
তবে ইতিহাস বদলে যেত, বদলে যেত আমাদের জীবন কাহিনী
আমাদের স্বপ্নগুলো ঝলমল করতো ভবিষ্যতের সোনালী আলোয়
কিন্তু হয়নি তা!
বিশ্বাসের পরিণামে চরম, নৃশংস মৃত্যু উপহার পেয়েছিলেন প্রিয়তম স্বামী
আমার প্রাণভ্রমরা!
আমি নিঃস্ব হয়েছি, আমি শূন্য হয়েছি
শূন্য হতে দেখেছি আমার দেশবাসীকে,
তারপর, তারপর লেলিহান কামনার আগুন দেখেছি কামুকের চোখে
না, না ওই লজ্জা জনক আগুনে পুড়তে পারিনি আমি
আমার মধ্যে অধিষ্ঠিত আত্মসম্মান আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো সর্বশেষ করুণ পরিণতির মুখোমুখি,
যে দেহ ছিলো শুধুই এক পুরুষে নিবেদিত প্রাণ
সে দেহ আগুনে আহুতি দিয়েছি
আমি জ্বলেছি, আমি পুড়েছি
পুড়তে, পুড়তে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে বলেছি
শোনো আগামী
শোনো তোমরা
দুরাচারীকে কখনো ক্ষমা কোরোনা
সন্ত্রাসীকে কখনো ছাড় দিও না
ইতিহাস থেকে কিছু শিক্ষা নিও।