
মাধ্যমিকে সেরার তালিকায় থৈবির নাম থাকলেও, আজ শুধু শোকের ছায়া শিল্পাঞ্চলে
নিজস্ব সংবাদদাতা: আসানসোল:- আনন্দের দিনে বিষাদের ছায়া আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা থৈবি মুখোপাধ্যায় এর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, স্কুল শিক্ষিকাদের মধ্যে। এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা রেজাল্টে জেলার ছাত্রীদের মধ্যে সম্ভাব্য সেরা ও স্কুলের সেরা হয়েছে আসানসোলের উমারানি গড়াই মহিলা কল্যান স্কুলের ছাত্রী থৈবি। এই বছর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলো থৈবি। তবে তার আগেই থৈবির জন্ডিস ধরা পড়েছিলো। পরীক্ষা শেষ হতেই তার চিকিৎসা করাতে মেয়েকে নিয়ে ভেলোর ছুটে গিয়েছিলো বাবা ও মা। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরীক্ষার পরে চিকিৎসকরা বলেছিলেন তার লিভার ট্রান্সফার করতে হবে। তার জন্য খরচ হবে ১ কোটি টাকা।পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, মা গৃহবধূ পিউ মুখোপাধ্যায় চিন্তায় পড়ে যায়।অসুস্থতার কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসে থৈবির স্কুল সহ সমগ্র আসানসোলবাসী। থৈবির চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়াতে সোশাল মিডিয়ায় আবেদন করা হলে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে পাওয়া গেছিলো ৪৫ লক্ষ টাকার মতো সাহায্য। কিন্তু সবার আপ্রাণ চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে যায়। বাঁচানো যায়নি থৈবিকে। ভিন রাজ্যের হাসপাতালে গত ১৬ এপ্রিল মৃত্যু হয় থৈবির।তারপর ১৭ দিন পর অর্থাৎ আজ বের হয় ২০২৫ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। তাতে দেখা যায় থৈবি তার স্কুলের সবার সেরা, জেলার ছাত্রীদের মধ্যে সম্ভাব্য সেরা। তার প্রাপ্য নম্বর ৬৭৪.(বাংলায় ৯৯, অংকে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৫ ও ভূগোলে ৯৫।) রেজাল্ট হাতে নিয়ে চোখের জল যেনো বাঁধ মানতেই চাইছেন পরিবারের সদস্যদের।আর থৈবির স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বা টিচার ইনচার্জ পাপড়ি বন্দোপাধ্যায় বলেন, কি বলবো? বুঝে উঠতে পারছিনা। খুবই খারাপ ও দুঃখের। ও যে ঐ অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে ৬৭৪ নং পেয়েছে, তা অন্য কেউ হলে পারতো না। আর সবার মুখে একটাই কথা। থৈবি সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলে রাজ্যের ১০ জনের মধ্যে অনেক উপরে থাকতো।

শুক্রবার সকালে রেজাল্ট জানার পর থেকেই শোকে ভেঙে পড়েছেন থৈবির বাবা-মা থেকে পরিবারের সদস্যরা। প্রায় একই অবস্থা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, অন্য শিক্ষিকা ও সহপাঠীদের । গত এপ্রিলেই জন্ডিস কেড়ে নিয়েছে থৈবির।
ছবি মাথায় ঠুকে বিড়বিড় করে কাঁদছেন ঠাকুমা সবিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন “আঁকা, গান সবেই পারদর্শী ছিল থৈবী ৷ জীবনে কখনও কোনও পরীক্ষায় হেরে যায়নি ও ৷ শুধু এইবার,, কথাটা শেষ করতে পারলেন না ৷ থৈবীর বাঁধানো ছবির কাঁচে টপটপ করে পড়ছে চোখের জল ৷
থৈবীর দাদু বাসন্তীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলা খুব ভালোবাসত ৷ আমি বলেছিলাম দাদুভাই কত পাবে বাংলায় ৷ আমাকে বলেছিল 96 পাবোই ৷ ওই পরীক্ষা দিয়েই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ৷ আমি রেজাল্ট দেখতে যাইনি ৷ ছেলেকে ফোন করেছিলাম ৷ বলল, আর রেজাল্ট দেখে কী হবে ? বাংলাতে থৈবীর প্রাপ্ত নম্বর 99 ৷রেজাল্ট শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন থৈবীর দাদু, ঠাকুমা সহ পরিবারের সদস্যরা।