বজ্রপাতে জ্বলছে তালগাছ,বিস্ময় ও উদ্বেগে রূপনারায়ণপুরের মানুষ

বজ্রপাতে জ্বলছে তালগাছ,বিস্ময় ও উদ্বেগে রূপনারায়ণপুরের মানুষ

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

রূপনারায়ণপুর গ্রামে সন্ধ্যায় এক অভূতপূর্ব ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক। দুর্গা মন্দির রোডের কাছে তেওয়ারি বাড়ির পাশে একটি তালগাছের ওপর সরাসরি বজ্রপাত আঘাত হানে। মুহূর্তের মধ্যে তালগাছটি দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে, আকাশে আগুনের লেলিহান শিখা আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা শুধু গ্রামবাসীদের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেনি, বরং বজ্রপাতের কারণে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকেও সামনে এনেছে।
মে-জুন মাসে বজ্রপাতের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় আকাশে কিউমুলোনিম্বাস নামক মেঘের সৃষ্টি হয়, যা ভূমি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে। এই মেঘের তলদেশে থাকে নেগেটিভ চার্জ, আর পৃথিবীর মাটিতে, বিশেষ করে তাল বা নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছের শীর্ষে জমা হয় পজিটিভ চার্জ। যখন এই দুই বিপরীত চার্জের মধ্যে তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, তখন মেঘ থেকে ভূমিতে বিশাল ইলেকট্রিক স্ফুলিঙ্গ বা বজ্রপাত নেমে আসে। এরকম ঘটনায় তালগাছটি এই প্রাকৃতিক শক্তির শিকার হয়ে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, তাল বা নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছ বজ্রপাতের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে বাড়ির আশপাশে এ ধরনের গাছ না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, এই ঘটনার পর তারা এখন বাড়ির কাছাকাছি থাকা তালগাছ নিয়ে উদ্বিগ্ন। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা তো ভাবিনি এমন কিছু হবে। এখন থেকে সাবধান হতে হবে।” আরেকজন বলেন, “এটা দেখে ভয় লাগছে। বাচ্চারা তো এখন গাছের কাছে যেতেই ভয় পাচ্ছে।”
এই ঘটনা গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছের নিচে না দাঁড়ানো, ধাতব বস্তু থেকে দূরে থাকা এবং সম্ভব হলে বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নেওয়া উচিত। এছাড়াও, বজ্রপাত প্রতিরোধে বাড়িতে লাইটনিং অ্যারেস্টার ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
রূপনারায়ণপুরের এই ঘটনা একদিকে যেমন প্রকৃতির অদ্ভুত রূপের সাক্ষী, তেমনি এটি আমাদের সতর্ক হওয়ার বার্তা দিয়েছে। সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে, তালগাছের আগুনে জ্বলার সেই দৃশ্য গ্রামবাসীদের মনে দীর্ঘদিনের জন্য রয়ে যাবে, যা তাদের প্রকৃতির শক্তির কাছে আরও নম্র ও সতর্ক হতে শেখাবে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )