
মৃত্যুর পরেও অপেক্ষা,রামনগর কোলিয়ারিতে প্রশাসনের নির্মম নীরবতা,২৪ঘন্টার পরেও বিক্ষোভ অব্যাহত
কৌশিক মুখার্জী: কুলটি:-
রামনগর কোলিয়ারির জিএম অফিসের সামনে একটি মৃতদেহ নিঃশব্দে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (SAIL)-এর এই কয়লা খনিতে কর্মরত শ্রমিক কেদার পান (৪৮) গত রবিবার হাসপাতালে দীর্ঘ তিন মাসের লড়াই শেষে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি ফেব্রুয়ারিতে কর্মক্ষেত্রে এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর পরিবারের কাছে ন্যায়বিচার একটি দূরের স্বপ্ন। মৃতদেহ অফিস প্রাঙ্গণে রেখে পরিবার ও স্থানীয়রা দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের একটিমাত্র দাবি কেদারের মেয়ের জন্য অবিলম্বে চাকরি।গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি, রামনগর কোলিয়ারির এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেদারের জীবনের শেষ অধ্যায়ের সূচনা করে।প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিন মাসের অমানবিক অপেক্ষা শেষে তিনি আর ঘরে ফিরতে পারেননি। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবের এক জ্বলন্ত প্রমাণ।কেদার পানের পরিবার এখন হতাশা আর জেদের মাঝে দাঁড়িয়ে।সোমবার সকাল থেকে তাঁরা মৃতদেহ নিয়ে কোলিয়ারি জিএম অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের ক্ষোভের মূলে রয়েছে প্রশাসনের নির্মম নীরবতা। পরিবারের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সহায়তা দেয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবই কেদার পানের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাঁদের দাবি,কেদার পানের মেয়েকে চাকরি দিয়ে পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা হোক। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।এই নীরবতা যেন পরিবারের ক্ষতের উপর লবণের ছিটে।স্থানীয়দের মধ্যেও ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, রামনগর কোলিয়ারিতে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। শ্রমিকদের জীবন রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, আর দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন।কেদার পানের মৃত্যু শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং শ্রমিকদের প্রতি প্রশাসনের অবহেলার এক নিষ্ঠুর চিত্র।
কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু এই আশ্বাস কি পরিবারের ক্ষত পূরণ করতে পারবে? কেদার পানের মেয়ের ভবিষ্যৎ, তাঁর পরিবারের একমাত্র আশার আলো, এখন প্রশাসনের হাতে বন্দি।
রামনগর কোলিয়ারির এই ঘটনা একটি জাগরণের ডাক। শ্রমিকদের জীবনকে মূল্যহীন ভাবার এই প্রবণতা কবে শেষ হবে? কবে প্রশাসন তাদের নির্দয় হৃদয়ের দরজা খুলে একটি পরিবারের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়াবে? কেদার পানের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, এটি আমাদের সকলের প্রতি একটি সতর্কবার্তা নিরাপত্তা, ন্যায় আর মানবিকতার দাবি আর উপেক্ষা করা যায় না। গোটা এলাকা এখন তাকিয়ে আছে,সেল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়, আর কেদার পানের পরিবার কবে ন্যায়ের আলো দেখতে পায়।