
নাবালিকা অপহরণের ঘটনায় উত্তপ্ত সালানপুর
কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-
আত্মীয়ের বিয়ের আনন্দে মেতে উঠতে এসে অপহৃত হল এক নাবালিকা। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বঙ্গের সালানপুর থানার অন্তর্গত সামডি গ্রামে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই ব্যক্তি—ফুচন খাঁ ও লক্ষ্মীকান্ত খাঁ—এর বিরুদ্ধে সালানপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে (কেস নম্বর ৮০/২৫)। ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১৩৭(২), ৩৫১(২) এবং ৩(৫)-এর অধীনে এই অভিযোগ রুজু করা হয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার কুন্ডহিত থানা এলাকার নগরি গ্রামের ওই নাবালিকা মেয়ে গত ১৩ মে তার মামার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সামডি গ্রামে এসেছিল। কিন্তু আনন্দের মাঝেই বিপর্যয়। ১৬ মে খবর আসে, কুন্ডহিতের বেলডাঙা গ্রামের দুই যুবক তাকে অপহরণ করেছে। নাবালিকার পিতা অভিযোগে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত লক্ষ্মীকান্তের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করলে তাকে অশ্লীল ভাষায় হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হন। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করেছে।এই ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন কাণ্ড নয়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় নাবালিকা অপহরণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে, অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে, এই অঞ্চলের বিভিন্ন থানায় মোট ৩৬টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৩১টিই নাবালিকা অপহরণের। আসানসোল উত্তর থানায় ৭টি, কুলটিতে ৬টি, রানীগঞ্জে ৪টি, অন্ডালে ৩টি, আসানসোল দক্ষিণে ৩টি, সালানপুর ও ফরিদপুরে ২টি করে এবং বারাবনি ও পাণ্ডবেশ্বরে ১টি করে মামলা রুজু হয়েছে। পরবর্তী মাসগুলিতেও এই ধরনের ঘটনা থামছে না, যা স্থানীয়দের মধ্যে শঙ্কা বাড়াচ্ছে।বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকায় এই ধরনের অপরাধের ঘটনা ক্রমশ উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। সম্প্রতি সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ি এলাকার আল্লাডি পঞ্চায়েতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। পুলিশের তৎপরতায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা গেলেও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল। তবে এই ঘটনাগুলি সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে সামনে এনেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অপরাধ কেবল আইনশৃঙ্খলার সমস্যাই নয়, এটি সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন সমস্যার প্রতিফলন। নাবালিকাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং এই ধরনের অপরাধের মূল কারণ উদঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন। স্থানীয়রা মনে করছেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়ানো এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান কঠিন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই মামলার তদন্তে পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে তৎপর। তবে এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, বরং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে। সমাজের সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।