উত্তপ্ত বারাবনি,বিজেপি ও তৃণমূল মুখোমুখি,পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন

উত্তপ্ত বারাবনি,বিজেপি ও তৃণমূল মুখোমুখি,পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন

কৌশিক মুখার্জী: বারাবনি:-

আসানসোলের বারাবনি থানার আমডিহা মোড় গতকাল রূপ নিয়েছিল রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ইটাপাড়া কয়লাখনির শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা ও বেকার যুবকদের চাকরির দাবিতে বিজেপির ডেপুটেশন কর্মসূচির মুখোমুখি হয় তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা মিছিল। ফল? গৌরান্ডী রাস্তায় রাস্তা অবরোধ, শ্লোগান, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বিস্ফোরক। এই ঘটনা কেবল দুই রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বই নয়, প্রশাসনের ভূমিকা এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তির এক জ্বলন্ত চিত্র তুলে ধরেছে।এ নিয়ে বিজেপির দাবি, তারা ইটাপাড়া কয়লাখনির শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা ও বেকার যুবকদের চাকরির জন্য শান্তিপূর্ণ ডেপুটেশন দিতে এসেছিল। কিন্তু তৃণমূলের “হার্মাদ বাহিনী” তাদের পথ আটকে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিজেপির জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য। তিনি গর্জে ওঠেন, “পুলিশ প্রশাসন তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে আমাদের ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু আগামী দিনে জেলা জুড়ে এই কর্মসূচি আরও বৃহত্তর হবে। প্রশাসন সামলাতে না পারলে বিজেপি কর্মীরা দেখে নেবে!” এই হুঙ্কারে স্পষ্ট, বিজেপি শ্রমিকদের নামে ভোটের মাঠে নিজেদের ‘ন্যায়ের পক্ষে’ হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া।পাল্টা জবাবে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অসিত সিংহ বলেন, “বিজেপিকে আটকায়নি তৃণমূল, আটকেছে এলাকার জনগণ। এই খনি স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় চালু হয়েছে, যেখানে ৫০০-৬০০ শ্রমিক কাজ করছে। বিজেপির কিছু নেতা কাটমানির লোভে এই আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।” তৃণমূলের এই দাবি তাদের ‘স্থানীয় স্বার্থরক্ষক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা, বিজেপিকে ‘বহিরাগত ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। দুপক্ষই শ্রমিকদের দাবিকে নিজেদের রাজনৈতিক মঞ্চে তুলে ভোটের ফায়দা তুলতে ব্যস্ত।পুলিশের ভূমিকা,নিরপেক্ষতা নাকি রাজনৈতিক চাপ?এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে তীব্র প্রশ্ন।বিজেপি অভিযোগ করেছে,পুলিশ তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। তৃণমূল বলছে, পুলিশ কেবল শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুপক্ষের রাস্তা অবরোধে গৌরান্ডী রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও, তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। প্রশাসন কি সত্যিই নিরপেক্ষ ছিল, নাকি রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার করেছে?ইটাপাড়া কয়লা খনির শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি এই সংঘর্ষের মূল কারণ হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল পাল্টা মিছিলে সেই দাবি যেন হারিয়ে গেছে।বিজেপি যখন ‘চাকরি ও ন্যায্য পাওনা’র কথা বলছে, তৃণমূল তখন তাদের ‘কাটমানির লোভী’ হিসেবে চিহ্নিত করছে। দুপক্ষই শ্রমিকদের নামে জনগণের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা তুলতে ব্যস্ত। কিন্তু প্রকৃত প্রশ্ন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি কবে পূরণ হবে? এই রাজনৈতিক নাটকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির মূল্য কে দেবে?আমডিহা মোড়ের এই ঘটনা শুধু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নমুনা নয়, এটি প্রশাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থপরতার এক কালো ছবি। গৌরান্ডী রাস্তায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য দায় কে নেবে? পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, আসল প্রশ্ন—শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি কবে পূরণ হবে? রাজনীতির এই মসলাদার খেলায় জনগণের জীবন যে পুড়ছে, তার জবাব কে দেবে? আমডিহা মোড়ের উত্তেজনা হয়তো শান্ত হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থের আগুনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কতদিন চলবে?

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )