
দেশ কি কর্পোরেট সেক্টরগুলোর অধীনস্থ হতে চলেছে !!!
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী-:
যেভাবে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র সরকার একের পর এক সরকারি সংস্থাগুলো কর্পোরেট সংস্হার হাতে তুলে দিচ্ছে তাতে আশঙ্কা হয় ইংরেজ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মত ‘বণিকের মানদণ্ড ধরা দিবে রাজদণ্ড রূপে?’ এভাবেই একদিন হয়তো সমস্ত সরকারি সংস্হাগুলো বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে যাবে। ‘দ্বৈত শাসন’ এর মত ক্ষমতাহীন দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকবে সরকার।
জ্বালানি তেলের দাম বাজার ব্যবস্থার উপর ছেড়ে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গে এখানেও ওঠানামা করবে। বাজারে তেলের দাম বাড়লে এখানে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কমলে দাম কমেনা। উৎপাদন শুল্ক, সেস, ভ্যাট ইত্যাদি ট্যাক্সের কথা শুনিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ কি করে জানবে তাদের ভোটে নির্বাচিত সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করবে। তেলের দাম যদি বাজারের উপর ছেড়ে রাখা হয় তাহলে বিপুল খরচ করে কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী রাখার দরকার কি?
শোনা যায় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একটি কর্পোরেট সংস্থা অস্ট্রেলিয়া থেকে বিনাশুল্কে কয়লা আমদানি করার বরাত পেয়েছে। সেই কয়লা অতিরিক্ত দাম দিয়ে কোল ইণ্ডিয়াকে কিনতে হবে। অথচ এই দায়িত্বটা কোল ইণ্ডিয়াকে দেওয়া যেতে পারত। এটাও কিন্তু সরকারি সংস্হাকে দুর্বল করে দেওয়ার চক্রান্ত। অথচ একজন কয়লা মন্ত্রী আছেন?
দীর্ঘদিন ধরে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে তাদের বঞ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের আগেই নাকি একটি কর্পোরেট সংস্থাকে হাজার কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। শোনা যায় সরকারি সংস্হা ‘হ্যাল’-কে বঞ্চিত করে রাফায়েলের বরাত নাকি দেওয়া হয়েছে একটি অভিজ্ঞতাহীন সংস্হাকে। একেই বলে স্বৈরাচারীতার চরম নিদর্শন।
সরকারি ব্যাংক বেসরকারিকরণের চেষ্টা চলছে। দুর্বলতার কারণ যে সরকারি নীতি সেটা সবার জানা। ওদিকে কর্পোরেট সংস্হার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে ব্যাংকগুলো আরও দুর্বল করা হচ্ছে। এতে যে দেশের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে সেটা মাথায় থাকছেনা।
শোনা যায় রেলের চাকা তৈরির বরাত নাকি চিনা কোম্পানি পেয়েছে। এক্ষেত্রেও বঞ্চিত হলো দেশের একটি কোম্পানি। সেক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইণ্ডিয়া’ স্লোগান গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
নিরাপত্তার স্বার্থে র্যাশন কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউণ্ট, আধার কার্ড সহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মোবাইল নাম্বারের সংযোগ বাধ্যতামূলক। ফলে একজন খুবই গরীব মানুষকেও মোবাইল ফোন কিনতেই হবে এবং প্রতি মাসে সিম রিচার্জ করতেই হবে। সিম রিচার্জ করার খরচ সাধারণ মানুষ জানে। এখানেও সরকারি সংস্থা বিএসএনএল এর পরিবর্তে একটি বেসরকারি সংস্হা কার্যত সমস্ত ক্ষীর খাচ্ছে। সরকার কত সহজেই তাদের আয়ের পথ করে দিচ্ছে। ইউনেস্কোর রিপোর্টে যে দেশের সত্তর শতাংশ মানুষ দু’বেলা প্রোটিন জাতীয় খাবার পায়না তাদের কাছে এটা চরম বিলাসিতা।
এইভাবেই প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সরকার আদৌ ভাবিত নয়। একমাত্র লক্ষ্য বিশেষ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার উন্নতি করা। বিরোধীদলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে মাঝে মাঝে চিৎকার করলেও তার মধ্যে কোনো আন্তরিকতা নাই। এটা চলতে থাকলে একদিন দেখা যাবে এই দেশ কোনো দেশীয় ব্যবসাদারদের কব্জায় চলে গ্যাছে। অর্থাৎ আবার আমরা পরাধীন।