অগ্নিদেব
মৌসুমী মণ্ডল (কলকাতা)

আজ খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল। পূব আকাশে সবে ভোরের আলো ফুটে উঠছে।আমি জানি তুমি এখন ঘুমোচ্ছ। চোখ খুলে যখন এই লেখাটা পড়বে তখন নিশ্চয়ই খুব অবাক হবে । লেখাটা পড়তে পড়তে তোমার সদ্য ঘুম ভাঙা আধ খোলা চোখ চিক্ চিক্ করে উঠবে, ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে উঠবে। আমি তখন সূর্যের প্রথম রশ্মির মতো তোমার নরম মুখখানা কল্পনা করে মনের অসুখ সারাবো।
ভোরের নীরবতায় কেমন যেন এক শূন্যতা জড়িয়ে ধরে।মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রাণ পেতে চায়।
আজ বেশ ঝলমলে অথচ মিঠে রোদ উঠেছে, আমার জানালার সান শেডের ওপর একজোড়া শালিক পাখি অনেকক্ষণ ধরে বসে বসে ওদের নিজের ভাষায় কত কী যে বলে চলেছে! আমি শুয়ে শুয়ে খানিক বোঝার চেষ্টা করলাম ওদের কথোপকথন ।
তারপর হঠাৎ মনে হলো, ওই দুই পাখি যদি আমরা হতাম তাহলে কেমন হতো? এই বিশাল নীল আকাশে ডানা মেলে দিতাম দুজনে। তারপর খানিক জিরিয়ে নিয়ে ডানা ঝাপ্টে স্নান করতাম কোনো এক নাম না জানা নদীর শান্ত শীতল জলে।
আচ্ছা পাখি হলেও কি আমি তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতাম? কী কবিতা লিখতাম! আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে হয়, আমরা যদি পাখিদের ভাষা বুঝতাম তাহলে কেমন হতো!!
ইশ আমি কী যে সব পাগলের মতো কথা বলি মাঝে মাঝে!!!
কিন্তু জানো তো আমার না সত্যি সত্যিই খুব ইচ্ছে হয় আমাদের দুজনকে কখনো পাখি, কখনো সমুদ্রের গভীরের রঙিন মাছ হয়ে কল্পনা করতে।
মানুষ হলে লুকিয়ে রাখতে হয় সবকিছু।
অভিমান লুকোতে হয়, ভালোবাসা লুকোতে হয়, চোখের জল লুকোতে হয়, অনুভূতি আবেগ সব লুকোতে হয়।
মানুষ ছাড়া এমন করে আর কি কেউ লুকোতে জানে সবকিছু?
আমার ভীষণ তোমার ঘরের প্রথম আলো হতে ইচ্ছে করে। সেই আলো যাকে তুমি পর্দা সরিয়ে নিজে আহ্বান জানাও।
আমার হিংসে হয় তোমার চারপাশের সবকিছুকে। আমার ইচ্ছে হয় তোমার জানলার পাশের গাছ হতে, যে স্থির চোখে তোমায় দেখতে পারে। আমার ইচ্ছে করে তোমার ব্যালকনির সামনের গাছের ফুল হয়ে ফুটতে, যার দিকে তুমি অপলক মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকবে। আমার ইচ্ছে হয় তোমার গল্পের নায়িকা হতে।
আসলে আমি হয়তো নিজের অজান্তেই তোমার সকল সৃষ্টির উৎস হয়ে উঠতে চাই। তোমার চোখে আমি কেবল নিজেকে খুঁজি।
তোমার সমস্ত সৃষ্টি জুড়ে আমার সার্বভৌম ক্ষমতা কায়েম করতে চাই আমি।তুমি কি শুধুই আমার হতে পারো না? বলো পারো?
বেলা হলো ঢের, এই বেলা উঠি। রোদ চড়ছে, গায়ের হালকা চাদর খোলার সময় হলো। মনের চাদর সরিয়ে দেবো তোমার সাথে দেখা হলে…