হদলায় বন মাফিয়ার দৌরাত্ম্য,কর্তৃপক্ষের মৌন সম্মতিতে ধ্বংস হলো প্রাচীন গাছ

হদলায় বন মাফিয়ার দৌরাত্ম্য,কর্তৃপক্ষের মৌন সম্মতিতে ধ্বংস হলো প্রাচীন গাছ

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

সালানপুর থানা এলাকার দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের হদলা গ্রাম থেকে মহেশপুর গামী প্রধান সড়কের পাশে আরো একটি প্রাচীন গাছের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে গেল।বন মাফিয়ার নির্মম কুঠারাঘাতে দিনের আলোয় ধরাশায়ী হলো একটি বিশাল চোড়রা গাছ।স্থানীয়দের অভিযোগ, এই গাছ কাটার পিছনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন মাফিয়ার গোপন যোগসাজশ রয়েছে।সরকারি কাগজপত্রে অনুমতি ও আদেশের খেলা চললেও,এই প্রাচীন গাছ আর ফিরে আসবে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হদলা থেকে মহেশপুর যাওয়ার রাস্তার পাশে অবস্থিত এই বিশাল গাছটি দিনদুপুরে কাটা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, এই ঘটনায় কারোর কোনো আপত্তি পর্যন্ত ছিল না।কেউ কেউ দাবি করেছেন,গাছ কাটার জন্য বন দপ্তরের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তবে প্রশ্ন উঠছে,রাস্তার ঠিক পাশে থাকা জমি কীভাবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে? এমনকি,আশপাশে কোনো বাড়িও নেই যে গাছটি কারোর জন্য বিপদ হয়ে উঠতে পারে।তাহলে কোন যুক্তিতে এই অনুমতি দেওয়া হলো?বন দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী,গাছ কাটার অনুমতির আগে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা গাছের অবস্থা পরীক্ষা করে। আবেদন যদি যুক্তিযুক্ত মনে হয়, তবেই অনুমতি দেওয়া হয়, নয়তো তা বাতিল করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় বন কর্মকর্তা ও গাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে যোগসাজশের তীব্র অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে রূপনারায়ণপুর রেঞ্জের বন কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ শিকদার জানিয়েছেন,হদলা বীট অফিসার গাছটি পরিদর্শন করেছেন এবং জমিটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হওয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাখ্যা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বন কর্মকর্তাদের কাজ কি শুধু গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া?নাকি তাদের দায়িত্বের মধ্যে বন সংরক্ষণও পড়ে? প্রতি দু-এক বছর অন্তর বদলি হয়ে যাওয়া এই কর্মকর্তারা তাদের কলমের একটি আঁচড়ে শত শত গাছের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে দেন।এই অধিকার কি শুধু তাদেরই, নাকি সেই সমাজেরও কিছু অধিকার আছে, যাদের গ্রামের ছায়া ও সবুজের প্রতীক ছিল এই গাছ?আগামী মাস থেকে রাজ্যজুড়ে বন অরণ্য সপ্তাহ উদযাপিত হবে।বন মহোৎসবের নামে ধুমধাম করে এই একই বন কর্মকর্তারা বনের উপকারিতা ও গুরুত্ব নিয়ে বড় বড় বক্তৃতা দেবেন। সমাজের তথাকথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দু-চারটি গাছ লাগিয়ে নিজেদের পরিবেশের ত্রাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কিন্তু বাস্তবে গ্রাম থেকে শহর, গলি থেকে জঙ্গল—দিন দিন গাছের সংখ্যা কমছে।সালানপুর থেকে বারাবনি পর্যন্ত এই ধ্বংসলীলা চলছে অবাধে।এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে, সরকার কি শুধু গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার জন্যই কর্মকর্তা নিয়োগ করে? যদি তাই হয়, তবে এমন কর্মকর্তা আমাদের প্রয়োজন নেই, যাদের একটি সইয়ে শত শত গাছের অস্তিত্ব মুছে যায়। পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেও পালন করতে হবে। নইলে, সবুজের এই ধ্বংসযজ্ঞে আমাদের ভবিষ্যৎও ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )