
বারাবনিতে বিজেপির মিছিলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি,লাঠি চার্জের অভিযোগ
[অসিত সিংকে চ্যালেঞ্জ দেবতনুর,২০২৬-এর বিধানসভার আগে অগ্নিগর্ভ আভাস]
কৌশিক মুখার্জী: বারাবনি:-
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল মহকুমার বারাবনি থানার ইটাপাড়া খোলামুখ খনি এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল ঘিরে হঠাৎ উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পড়ল। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে বিজেপির ডাকা এই মিছিল ও ডেপুটেশন কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।মিছিল এগিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে তীব্র বচসা ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। বিজেপির অভিযোগ,পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করেছে, যার ফলে একজন আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে,এই এলাকায় কোনো মাইনিং অফিস না থাকায় মাইনিং কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা শুধুমাত্র বোঝানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছে।
এই ঘটনা বারাবনির শান্ত মাটিতে এক অশান্ত ঢেউ তুলেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শতাধিক কর্মী-সমর্থক এই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।তিনি জানান, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য এর আগেও তারা আন্দোলন করেছেন,কিন্তু প্রতিবারই বাধার মুখে পড়েছেন।এবারও তারা ঘোষণা করেছিলেন যে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে মিছিল করবেন এবং মাইনিং কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি পত্র তুলে দেবেন। তিনি বলেন, এই মিছিলের মধ্য দিয়ে বারাবনির মানুষের কাছে তাদের সংগঠনের শক্তি ও শ্রমিকদের পাশে থাকার অঙ্গীকার পৌঁছে গেছে। তবে এই ঘটনা শুধু শ্রমিকদের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং রাজনৈতিক উত্তেজনার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।দেবতনু ভট্টাচার্য এই ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বারাবনি ব্লক সভাপতি অসিত সিংকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী জুলাই মাসে অসিত সিংয়ের বাড়ির সামনে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, এই সমাবেশ আটকানোর সাধ্য থাকলে অসিত সিং চেষ্টা করে দেখুন। এই চ্যালেঞ্জ শুধু একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বারাবনির রাজনৈতিক মাটি যে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে চলেছে, তারই আগাম সংকেত।বারাবনির এই ঘটনা কেবল একটি মিছিল বা সংঘর্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতির ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি প্রতিচ্ছবি। বিজেপির আগ্রাসী অবস্থান এবং তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও স্পষ্ট না হলেও,এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণের জন্ম দিয়েছে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বারাবনির মতো শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তীব্র হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ।
এই ঘটনার পর বারাবনির রাস্তায় এক অস্বস্তিকর শান্তি বিরাজ করছে।কিন্তু এই শান্তি যে ঝড়ের পূর্বাভাস, তা স্পষ্ট। দেবতনু ভট্টাচার্যের সমাবেশের ঘোষণা এবং তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি তার কঠোর বার্তা এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী দিনে বারাবনির মাটি কীভাবে এই উত্তেজনার মোকাবিলা করে, তা শুধু স্থানীয় মানুষই নয়, গোটা রাজ্যের রাজনীতির দিক পালকরাও নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করছেন। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—বারাবনির রাজনৈতিক ময়দান অগ্নিগর্ভ হতে চলেছে।