শ্রদ্ধাঞ্জলি

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

আমার প্রেমিক কখনো একগুচ্ছ ফুল এনে খোঁপায় গুঁজে দেয়নি
কোনোদিন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে নিয়ে যায়নি
তাই মনে মনে অভিমান হতো খুব,
একদিন হাতে নজরুল ধরিয়ে দিয়ে বললো ‘এই নাও তোমায় সব দিলাম
যা কিছু প্রয়োজন এখান থেকেই পাবে’
প্রেমিককে স্বামী হিসেবে চাইতেই উনি আমায় নার্গিস দেখালেন,
আমার স্বপ্ন তখন টালমাটাল
আমি হাতজোড় করে একটা সংসার চাইলাম
উনি আমাকে অপুষ্টিতে নিহত সন্তান দেখালেন,
আমি আমার জীবনের জন্য বিদ্রোহ চাইলাম
উনি দেখালেন জীবনের বাইরে দেশের গণ্ডি,
আমি অর্থনৈতিকভাবে ধনী হতে চাইলাম
উনি আমাকে দিলেন সস্তায় সৃষ্টি বিক্রির দলিল,
আমি সুখ চাইলাম
উনি দিলেন এক আকাশ অসুখ
আমি আহত হলাম,
না না এ কবির জীবনে নেই বিদ্রোহ
পুরো জীবনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে কোথাও পেলাম না সুখের রেশ
প্রচন্ড বিদ্বেষে প্রেমিককে বললাম
আমি চাইনা তোমার এই উপহার
পলকা কথায় জাগতিক প্রেমে বিচ্ছেদ হলো আমাদের,
গভীর রাতে অন্তরে বিষের বাঁশরী বাজলো
প্রথমবার না দেখার যন্ত্রনা এলো বুকে
কষ্টে শব্দ বের হলো
বিরহে তারা সুর পেল
কান্নার কাজল ধোয়া চোখ থেকে নেমে এলো অপেক্ষা
একরাশ ভালোলাগা এসে ঘিরে ধরলো
অপেক্ষা এতো সুন্দর হয়!
কষ্ট ভুলতে অক্ষর লিখলাম
সবাই বললো অসাধারণ কবিতা
আমার হৃদয় পরিপূর্ণ হলো!
অন্তরে অনুভব করলাম অন্য একজনের উপস্থিতি
তাকে প্রশ্ন করলাম কে তুমি? কে তুমি এ পথের দিশারী?
বহু না পাওয়ার মধ্যে দেখালে খ্যাতির শিখর?
আসক্তি আর মুক্তির মাঝামাঝি এসে দাঁড়ালেন সাম্যের কবি
বুঝলাম এই তো দেবতা
যিনি নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষা দিয়ে গেছেন
মন গেয়ে উঠলো “শূন্যে মহা আকাশে তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে
ভাঙিছো গড়িছো নিতি আপন মনে
নিরজনে প্রভু নিরজনে খেলিছো”
তারপর থেকে আর কারোর কাছে কিছু চাইনি
পাওয়ার মতো আর কিছুই বাকি নেই আমার।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )