পত্র দিলাম প্রত্যুত্তরে

সোমা নায়ক (কলকাতা)

অফিস ফেরত আজ বিকেলে
খবর পেলাম পত্র আছে
আমার নামে! কে পাঠাল?
প্রশ্ন ছুঁড়ি মায়ের কাছে।

মা খানিকটা ক্ষুণ্ন বোধহয়। বললো না আর তেমন কিছু
তুমি তো জানো নাছোড় আমি। চুপিচুপি নিলাম পিছু।

বলো না মা, কিসের চিঠি?
আমায় কে আর করবে খোঁজ!
চাকরিবাকরি? অন্যকিছু?
এমন তো আর ঘটে না রোজ।

চলতে গিয়ে থমকে গেল। ফিরল আবার তৎক্ষণাৎ -ই
দেরাজের ওই নীল চিঠিটা, তোমার নামে। তিন সত্যি।

সেই মেয়েটা, কি যেন নাম!
অভিমানী, আহ্লাদী খুব
কথায় কথায় কাঁদত ভীষণ।
ভাবনা ঘরে আচমকা ডুব।

ওই যে রে ওই, কোঁকড়া চুল,
হাসলে গালে টোল পড়তো
পুরনো যা সব নষ্ট জিনিস,
সেসব দিয়ে নতুন গড়তো।

বুক ঢিপঢিপ। বলে কি মা! তুমি নামের জীবন দলিল!
সত্যি বটে? স্বপ্ন নয়তো? মৌচাকে কেউ ছুঁড়েছে ঢিল?

অসহ্য এক যন্ত্রণাতে
নুইয়ে পড়ছে মন ও মাথা
হাতের মুঠোয় চেনা সুবাস, পর্ণমোচীর নতুন পাতা।

অনেক কিছুই দেখছি লেখা, অভাব স্বভাব, প্রেম ও প্রীতি
সবার প্রথম দৃষ্টি ফেলে নিলাম দেখে চিঠির ইতি।

এতোকিছু জানার আছে?
আমায় নিয়ে এতো ভাবো?
আমিও একই পথের পথিক,
তোমায় ছাড়া কোথায় যাবো।

মনের খবর? কি আর বলি,
কেটেই যাচ্ছে রাত্রি দিন
খেরোর খাতায় জমছে রোজই
তোমার কাছে অগাধ ঋণ।

জলসাঘরের ঝাড়বাতিটা হঠাৎ ঝড়ে পড়লো যেদিন
তারপরে আর জ্বলেনি আলো, আঁধার জীবন আলোকবিহীন।

দু এক কলি গান গাইলেই নিজের কানে বেসুর লাগে
একটা মানুষ প্রতীক্ষাতে আকাশ দেখে, রাত্রি জাগে

রান্নাবান্না? খুব শিখেছি।
কেক প্যাটিস বা পিঠে পায়েস
সবধরনের খাবার বানাই,
যখন যেমন যা ফরমায়েশ।

অবাক হলে? ব্যবসা করি, সামলাই সব হাতে হাতে।
দিনের শেষে অফিস সেরে আমি আর মা দুজন সাথে।

বিয়ের কথা রোজই ওঠে,
পড়শি মানুষ, আত্মীয়স্বজন
কম কিছু নয়। শোনায় কথা যখন তখন মাও ভীষণ।

এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাটুকু আমার, শুধু আমিই করি
অজুহাতে সামনে যা পাই, সবকিছুকেই আঁকড়ে ধরি।

তোমায় ভেবে, তোমার সাথে,
তোমায় ছাড়া ভালোই আছি
রোজই তোমায় হারিয়ে পাই,
এ-সুখ আগলে জীবন বাঁচি।

চিঠির শেষে নতুন করে নাম লিখব! থাকুক নাহয়।
স্বাক্ষরহীন একটা চিঠি। এটাই আমার হোক পরিচয়।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )