
আসানসোলে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে, রাজ্য সম্পাদকের বিস্ফোরক অভিযোগ জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে
কৌশিক মুখার্জী: আসানসোল:-
নির্বাচনের দামামা বাজতে না বাজতেই পশ্চিম বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দল এবার প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য কমিটির সম্পাদক পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছেন। এই ঘটনা আসানসোল শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, জেলা সভাপতি দলের কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন এবং দলের সংহতি ভাঙার জন্য দায়ী। তিনি বলেন, “সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগে তৃণমূল কংগ্রেস এই এলাকায় এক লক্ষ ভোটে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট কমে মাত্র চল্লিশ হাজারে দাঁড়িয়েছে।” এছাড়াও, তিনি সভাপতির বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, “২০২১ সালের নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপির টিকিট পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। এমনকি, তাঁর এলাকায় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় তিনি বিজেপিকে মাইলেজ দিয়েছেন। এখন তিনি দলের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন এবং তৃণমূলের বদনাম করছেন।”
রাজ্য সম্পাদক কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, “নির্বাচনের আগে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সভাপতিকে অবিলম্বে কর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং দলের স্বার্থে কাজ করতে হবে।” এদিকে, এই অভিযোগের সুযোগ নিয়েছে বিরোধী দল বিজেপি। আসানসোল পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপির রাজ্য নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে শাসক দলকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল আমাদের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ থেকে স্পষ্ট, তৃণমূলের নেতৃত্বে কোনও ঐক্য নেই।” তবে তিনি জেলা সভাপতির দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, “বিজেপি কোনও দেশদ্রোহী, সমাজবিরোধী বা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দলে নেবে না। রাজ্য সম্পাদকের কথায় সভাপতির চরিত্রের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে।” পশ্চিম বর্ধমান জেলা, বিশেষ করে আসানসোল শিল্পাঞ্চল, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই গোষ্ঠী কোন্দল দলের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগে এই ধরনের প্রকাশ্য কোন্দল তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে পারে। এলাকার সাধারণ কর্মীরা বিভ্রান্ত এবং হতাশ। এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই ধরনের কোন্দল আমাদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। নেতারা যদি নিজেদের মধ্যে লড়াই করেন, তাহলে আমরা কীভাবে বিজেপির মতো শক্তিশালী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লড়ব?” রাজ্য সম্পাদকের এই বিস্ফোরক অভিযোগ এসেছে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে, যেখানে তিনি জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরেন। এই সম্মেলন পশ্চিম বর্ধমানের রাজনৈতিক গোষ্ঠী কোন্দলের চরম রূপ প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত অনেকে এই ঘটনাকে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন। একইসঙ্গে, বিজেপির মতো বিরোধী দল এই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই পশ্চিম বর্ধমানের রাজনৈতিক সমীকরণ জটিল হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই অন্দরের কোন্দল দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজ্য নেতৃত্ব এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে এই কোন্দল কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আসানসোলের রাজনৈতিক মঞ্চ এখন উত্তপ্ত। জেলা সভাপতির ভূমিকা, রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, এবং বিজেপির কৌশল—সব মিলিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের নির্বাচনী লড়াই আরও জমে উঠছে। এই গোষ্ঠী কোন্দলের ফলাফল কী হয়, তা সময়ই বলবে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট—রাজনীতির এইঠে এখন কেহুই পিছু হটিবার পাত্র নয়।