দ্বৈতের সন্ধানে
মালা মুখোপাধ্যায় (কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান)

সেদিন হঠাৎ করে মনে পড়ে সেদিনের কথা রূপার। বয়স কত আর ? চল্লিশের ঘরে। ফোন পেয়েছে হাতে এন্ড্রয়েড। মেয়ে দিয়েছে বিয়ের পর। একমাত্র মেয়ে । ওর শ্বশুরবাড়ি কাছেই। স্বামী কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তবে মেয়ের বিয়ে দেখেই গেছেন।
সময় কাটাতে অল্প অল্প ফেসবুকে লেখেন। বন্ধু বাড়ে। শোক অনেকটাই কমে এলো যখন ওর মতো একজন কবির সঙ্গে খুব বেশি বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
সত্যিই এই বয়সে একজন বন্ধু দরকার। সবকথা মনের বলাবলি শুরু। বেশ কয়েকমাস যেতে যেতে বুঝতে পারে রূপা তার এই বন্ধুটির অনেক বন্ধু আছে তার মতোই।
প্রথমটা অবাক হয়ে এই বন্ধুটিকে বলেন, পরস্ত্রী যতো ছোট হোক না কেন, ফেসবুক থেকে পরিচয়, তাদেরকে নাম ধরে ডাকা , তুমি তুমি বলা কোন ধরনের ভদ্রতা? এই অধিকার তাকে কে দিয়েছে? মেয়েরা একটু লেখালেখি করতে ফেসবুকে আসে মানে তারা অত নগন্যা
নয় কিন্তু।
ওনার নাম জিতেন্দ্র অথচ জয় কিছুই করতে পারেননি। সাদামাটা ইন্দ্রের বশ। যেখানে পরস্ত্রী পান সেখানেই ছুটে যান।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রূপা তার একাকিত্বের শোক ভোলার জন্য একজন প্রকৃত বন্ধু খুঁজে ছিলেন। প্রথম প্রথম জিতেন্দ্রের ব্যবহার এতোটাই মুগ্ধ করেছিল ,রূপা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন।
রূপার অনেক টাকা আছে। বুঝতে পারছে না টাকার লোভেই কি জিতেন্দ্র অভিনয় করে কাছে এসেছিলেন?
চোখে জল আসেনি। এসেছে ঘৃণা। বন্ধুত্বের নামে এই ফেসবুকে কত কী ঘটছে রোজ !
মুখোশের আড়ালে কী ভয়ঙ্কর রাক্ষসের বাস !
মিথ্যার আড়ালে কী নিদারুণ ভাবে ইমোশনকে খুন করা হচ্ছে প্রতিদিন।
চারিদিকে কেবল চোরাবালি। পা দিলেই অতলে।
নেট এসেছে। বিজ্ঞান উন্নত হয়েছে। কিন্তু প্রতারণা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আপনমনে হাসতে হাসতে ভগবানকে বলে আমার কি দোষ বলো ? প্রকৃতি তো দ্বৈত নিয়ে চলতে চাই। জিতেন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব সেই দ্বৈতেরই খেলা। প্রকৃতির ফাঁদ।
অশেষ ধন্যবাদ জানাই নিজেকে, খুব তাড়াতাড়ি যে একজন ঠগকে চিনতে পেরেছেন এটাই মঙ্গল।
রূপা ভাবছিলেন না জানি আর কত কত জন মানুষ এই ফেসবুক থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
মানুষ ঠকে যাচ্ছেন দিন দিন এই ফেসবুক থেকে।
রূপা মানুষ বললেন এই কারণেই হয়তো অন্য কোথাও রূপ বলে কোনো একজন ভদ্রলোক ঠকছেন।
আয়নার সামনে নিজেকেই রূপা স্যালুট জানাই। খুব কম সময়ে ব্রেণ ক্যালকুলেশন করেছেন হৃদয়ের কাটাকাটির মধ্যে না গিয়ে।
স্মার্টফোন হাতে নিয়ে জিতেন্দ্রকে সারাজীবনের জন্য আউট করে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেন। কেবল বুকের উপর একটি উপন্যাস । আসল দ্বৈতের সন্ধান। কোনোদিন আর রূপা নিজেকে আঘাত দেবে না।