আমার স্মৃতিরা ঘরে ফেরে
শুক্লা সরকার (রাজারহাট-নিটাউন, কলকাতা)

পূরনো-স্মৃতিগুলো গুছিয়ে রেখেছিলাম,
বইয়ের তাকের ভাঁজে – ভাঁজে।
হঠাৎ দমকা – হাওয়ার মত
নিজেদের অভ্যাসে উঁকি দিয়ে বলল,
যাবে নাকি পিছনের ঐ মাঠটাতে,
নদীর – ধারের সবুজ-ঘাসের গালিচায় বসে,
আর একটিবার ফুলের শুকনো – বীজগুলি
ছড়িয়ে, ছিটিয়ে, আবার ফুলফোটাতে।
আমার গোছানো – মনটাকে,
ওলট – পালট করে দিয়ে বলল,
দুঃখের ও অনেক কথা বলার থাকেগো!
সুখেদের সময় বড় অল্প,
বড্ড তাড়াহুড়ো করে ওরা।
আকাশে ডানা মেলে উড়ে যায় চলো –
দূরে, বহুদূরে —
যতদুর চোখ যায় — উড়ে যায় চলো।
অনেক”গান” আছে —
তারা কিছু গাইতে চায়।
অনেক মুখোশের আড়ালে “গল্প” আছে,
তারা বলতে চায়, তাদের মনের কথা।
পাখীদের ডানা মেলা আকাশ –
ছুঁয়ে যায় স্মৃতি।
দিন – রাত্রি মিশে যায়, সবুজ ঘাসের ভিড়ে।
সকালের সূর্য ডেকে নিল,
মুখের উপর একরাশ সোনালী আলো ফেলে।
ফুলের সবটুকু সৌরভ, আমায় দিল সবার আগে।
হৃদয় – নিঙরে দিল, তার যত ভালবাসা।
শিশির – ধোয়া পায়ে
গুটি – গুটি এসে শিউলি বললো,
ফুলের সুবাস ঢেলে দেবো তোমার সারা শরীরে ।
দেখবে, প্রজাপতিরা রংবেরঙের বাহার নিয়ে –
তোমায় ছোঁবে।
ডানা মেলে বলবে, এসোগো, ডালিয়া, গাঁদা,
চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ ফুটে গেছে।
সাজিয়ে নেবে, চলো, নিজের বাহার।
নীল পাহাড়ের কোলে কেমন, দুপা যেতেই –
বলল হেসে, আগের মতই রয়েছি ঘেঁষে –
সব পাহাড় একসাথে।
পরম – স্নেহে জড়িয়ে নিল ঝর্না এসে,
ভিজিয়ে দিল এক নিমেষে।
দু – হাত ভরে স্নিগ্ধ – জলে –
স্নান করালো আমায় টেনে।
মেঘের – খেলা পাহাড় – কোলে,
পাখীর – সুর ডানায় মেলে –
গান শুনালো নীল – পাখীটা
স্মৃতির – ভিড়ে আমায় পেয়ে।
স্বচ্ছ – জলে মাছেরা সব খেলার ছলে
দিল আমায় লেজ ঘুরিয়ে জল ছিটিয়ে।
ওদের কাছে যেটুকু পায়,তাতেই হৃদয় ভরে,
ভেজা মাঠে, শীতের শিশিরে,
হেঁটে যাই আলপথ ধরে,
কচি ধান পেকে আসে, হিমেল বাতাসে।
সময়ের সাথে সাথে,স্মৃতির পাতারা হয় ফিকে,
জলপাই রঙ ধরে, হৃদয়ের মিঠে রোদ্দুর,
গোলাপী-সুখের মত হেঁটে গেল মনের ভিতর।
সময়ের – অন্তরালে স্মৃতিগুলো খুঁজে ফেরে –
হৃদয়ের অন্তর বেদনায়,
সুপ্ত – ইচ্ছাগুলি প্রাণ পেতে চায়।
স্বপ্নে-ভেজা-মন,গোলাপ-পাপড়ি মেললো যেন-
ব্যাকুলতা মানেনা শেষ অভিমুখে,
ছুটে চলে,ঝড়ো হাওয়ার মত রাত্রি-শেষের
মোমবাতি – জ্বলা আকাশের মুখ।
আকাশী-স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে যায় স্মৃতির পাতা,
তখনি একলা বকুল, সামান্য ফুল,
ঝরা – বকুলের দলে।
স্মৃতির-পাতারা ঘরে ফেরে একে, একে,
আমার কবিতারা উৎস খুঁজে পায়।