রূপনারায়ণপুর টোল ট্যাক্স, টেন্ডারের তোড়জোড় আর চিঠির চমক!

রূপনারায়ণপুর টোল ট্যাক্স, টেন্ডারের তোড়জোড় আর চিঠির চমক!

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

রূপনারায়ণপুরের টোল ট্যাক্স কেন্দ্র—এ যেন এক অঘটনের গল্প।দশ বছর ধরে ধুঁকতে ধুঁকতে চলা এই টোল প্লাজার টেন্ডার নিয়ে নতুন করে হইচই শুরু হয়েছে। ঠিক যখন সবাই ভাবছিল,এবার বোধ হয় নতুন ঠিকাদারের হাতে চলে যাবে এই কেন্দ্র, তখনই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক চিঠি এসে সব গণ্ডগোল পাকিয়ে দিয়েছে। এই চিঠি যেন একটা হঠাৎ বোমা, যা টেন্ডারের আগের দিন ফেটে সবাইকে হকচকিয়ে দিয়েছে। তবে, পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরি কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে বলে দিয়েছেন, “টেন্ডার হবেই!” কিন্তু প্রশ্ন হল, এই চিঠির ধাক্কায় টেন্ডারের গাড়ি কি টালমাটাল হয়ে যাবে?চলুন, গল্পটা একটু খোলসা করে বলি।২০ই জুন থেকে শুরু হচ্ছে ই-টেন্ডার। ছয়টি সংস্থা ইতিমধ্যেই হাত উঁচিয়ে বলেছে,“আমরা আছি!” ২৫শে জুন পর্যন্ত এই টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলবে। কিন্তু এর মাঝেই পিডব্লুডি ডিরেক্টরেটের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের ১০ই জুনের একটি চিঠি এসে যেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, চিত্তরঞ্জন মোড় থেকে রূপনারায়ণপুর হয়ে ঝাড়খণ্ডের গোবিন্দপুর পর্যন্ত রাস্তাটি এবার দুই লেনের হতে চলেছে। এমনকি এই রাস্তার নামও বদলে যাচ্ছে—১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে হয়ে যাবে ৪১৯ নম্বর!ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজও শুরু হয়ে গেছে। গত বছর ১২ই আগস্ট জনশুনানি হয়েছে, এবার রাস্তা চওড়া করার কাজও তড়িঘড়ি শুরু হবে।কিন্তু এখানেই ঝামেলা! এই রাস্তার পাশে কোনো জলের পাইপ,গ্যাসের লাইন, বিদ্যুতের খুঁটি বা কেবল বিছানোর অনুমতি দেবে না জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।এখন মজার ব্যাপার হল, টোল ট্যাক্স কেন্দ্রের নতুন ঠিকা দারকে নিজের খরচে অফিস, কাউন্টার,এমনকি কর্মীদের থাকার জায়গা পর্যন্ত বানাতে হবে। এই শর্ত শুনেই অনেকে ভুরু কুঁচকে বলছেন, “এ কেমন টেন্ডার রে বাবা? রাস্তা চওড়া করতে গেলে তো টোল প্লাজা ভেঙে ফেলতে হবে, তাহলে এত খরচ করে কে বানাবে এসব?” সত্যিই তো, যদি ছয় মাস পরে রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে এই নতুন টোল কেন্দ্রের কী হবে? ধুলোয় মিশে যাবে, নাকি ঠিকাদারের টাকা জলে যাবে?
তবে সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরি এখানেও বাজিমাত করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “টেন্ডার হবে, তবে শুধু এক বছরের জন্য। যদি ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে, তাহলে টেন্ডার বাতিল হয়ে যাবে।” এ যেন একটা জুয়ার খেলা! ঠিকাদাররা টেন্ডারে ঝাঁপ দেবেন, কিন্তু ছয় মাস পরে হয়তো হাতে থাকবে শূন্য। তবু জেলা পরিষদের কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, টোলের টাকা আদায় বন্ধ হলে যেন তাদের প্রাণ বেরিয়ে যাবে! তাই বলে কি এই টেন্ডারের নামে শুধু একটা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে?
এদিকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা শুনে মনে হচ্ছে, রূপনারায়ণপুরের রাস্তা দুই লেন হলে গাড়ি চলাচল হবে বেশ মসৃণ। এতে জেলা পরিষদও খুশি, কারণ তাদের সহযোগিতা ছাড়া তো কাজ এগোবে না। কিন্তু এই সব কিছুর মাঝে সাধারণ মানুষের মাথায় একটাই প্রশ্ন—টোল ট্যাক্সের এই নাটক কবে শেষ হবে? নাকি এই চিঠি আর টেন্ডারের খেলায় শেষমেশ সবাইকে হাততালি দিয়ে নাটক দেখতে হবে? সময়ই বলবে, রূপনারায়ণপুরের এই টোল ট্যাক্স কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ কী!

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )