অসমাপ্ত পিতৃস্নেহ

রুচিরা সাহা (ইংলিশবাজার, মালদহ)

জীবনের অট্টহাস্য বোঝা বড় দায়,
বসন্ত শেষ এলো দহন জ্বলার জ্যৈষ্ঠ মাস।
ছুটির দিন কেন যেন তাড়াতাড়ি স্নান সেরেছিলে,
ঠিক স্কুলে যাওয়ার আগের মতো।
এক সাথে মধ্যাহ্ন ভোজন হবে ছিল তো কথা —
কিন্তু রাখলে না তুমি তোমার কথা।
ঝাঁ ঝাঁ করা মধ্যাহ্ন বেলার রৌদ্রে,
হঠাৎ এলো খেয়া তরী যাবার তরে।
তোমার শরীর আমার কাঁধে
সমস্ত ভার ছেড়ে দিলে;
অজান্তেই বিনা মেঘে বজ্রপাত।
সংলাপ, বিলাপ কণ্ঠে
প্রচন্ড দাবদাহে ধূ ধূ পথ
ছুটে চলেছে তাঁরা শেষ দেখার জন্য।
রজনীগন্ধা, বেলি ফুলে ঢাকা পার্থিব শরীর।
জ্বলছে ধূপ আপন মনে
স্বর্গ রথ এলো রজনীগন্ধায় ভরা
লোকে স্বান্ত্বনার বাণী দিয়ে যায়।
কিংকর্তব্য বিমূঢ় আমি
পায়ের তলায় মাটি নেই। এক সময় চোখের জল এলো শুকিয়ে।
পরিবারের সকলেই দুঃখে বিমূঢ়।
কোথা থেকে একটি
শীর্ণকায় লোকটি জুগিয়ে ছিল সাহস।
দুপুর গড়িয়ে দিন শেষে রাতের শ্মশানে
দুঃসাহসের চিতা,
পুড়িয়ে ফেলে সমস্ত স্মৃতি
জ্বলছে চিতা শেষ বারের মতো দেখা
মনে হয়ে ছিলো কিছু বলবে
আর বলা হয় নি তাঁর।
চাঁদের আলোয় শান্ত যখন শ্মশান ভূমি
দেখলাম সন্ধ্যা তারার অঞ্জলি
হারিয়ে গেল স্বপ্নের কলি মলিন এক অন্ধকারে
নিশ্চুপ,নিরীহ,উচ্চ কণ্ঠে নয় কথা।
সাদা ধুতি,পঞ্চাবী হাতে একটা দামী কোম্পানির ঘড়ি,পায়ে কালো স্যান্ডল,
পর পর জ্বলছে চিতা
উঠছিলো সামান্য ঝড়;
ঝরলো কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি,
নিভেও চিতা আবার জ্বলে ওঠে।
ঠাঁই হলো তখন শ্মশানভূমির মন্দিরের দরজায়,
সারা রাত আপ্রাণ কাকুতি ছিলো,
ফিরিয়ে দাও একটি বার।
আজ ও একত্রিশ বছর পার করে,—–
সকাল থেকেই পথ চেয়ে থাকি,
সকাল থেকে দুপুর দুপুর থেকে রাত অপেক্ষায় থাকি
কোন বেশে আসো তুমি,
থাকি শুধু খুঁজতে খুঁজতে শেষে ক্লান্ত হয়ে যাই ফিরে।
আবার ইচ্ছে হয় তোমার হাত ধরে ছোট্ট পায়ে হাটবো,
নিয়ে যাবে তোমার খুকুকে নদীর ধারে বেড়াতে।
হাসনুহানা,মালতি লতা আজও ফোটে।
নেই শুধুই তুমি —
অনেক চাওয়া পাওয়ার মাঝে,
ব্যর্থ জীবন আজও একত্রিশ বছর পর দরজার পাশে নিস্পলক দৃষ্টিতে ;
খোঁজে তোমার সেই আদরের কন্যা—–

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )