ফুলকাকিমা
লিপিমিতা তনুশ্রী (কলকাতা)

ফুলকাকিমার হাঁস দুটো আর নেই
পুকুরজলে এখন শুধু কাতলা-মৃগেল-রুই
“আয় টি-টি আয়” ডাক শুনিনা আর
জলের ধারে শ্যাওলাদামে শূন্য পুকুরপাড়।
সেই সেবারে ঘোর শ্রাবণের দিনে
ভরা কোটাল বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে
দুই পুকুরের মধ্যিখানের পাড়
ভাঙল যখন তুমুল তুফান বান,
ডুবল পথ ডুবল ঘাট দুকূল একাকার
জলের তোড়ে ভাসছে চারিধার।
ফুলকাকিমা ডাকছে কেবল
জলের দিকে চেয়ে —
” আয় টি-টি আয়”, “আয় টি-টি আয়”;
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা তখন প্রায়
মেঘের গুরু অশনিসম্পাত
কোথায় গেল, কি যে হলো হায়
হংস-জোড়ার নিশান কোথাও নাই।
ফুলকাকিমার বিষণ্ণ মন শূন্য দৃষ্টি
মাঝে মাঝেই পাড়ের দিকে চেয়ে
গভীর শোকে দীর্ঘশ্বাস পড়ে!
তারপরেও তো কাটল কটাদিন
আক্ষেপ আর অনুশোচনা ঘিরে।
কাজের মধ্যে স্নেহস্বরে, হা-হুতাশে
হাঁস দুটো তাঁর স্মৃতিতে শুধু ভাসে।
এমন করেই ভরা প্লাবনের দিনে
হু হু করে ঢুকল ঘরে জল
ওদিক থেকে খড়ের চাল ফুড়ে
হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি ঘরের ভিতর,
ভাসছে ঘটি ভাসছে বাটি
ফুলকাকিমার একার সংসার!
সেদিন রাতেই গায়েতে ধুম জ্বর
শীতল জলেও আগুন যেন দেহে
কাঁথা কম্বল যা ছিল সম্বল
সবই তখন ভিজে সপাসপ।
ভোর-রাতেরই কিছুটা সময় পরে
আকাশে যখন ফুটছে পুবের আলো
ঘন মেঘের আঁধার কেটে গিয়ে
ফুলকাকিমা আকাশতারা হলো।।