
শহরে চুরির উৎসব: পুলিশ ও আরপিএফের নাকের ডগায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব
কৌশিক মুখার্জী: চিত্তরঞ্জন:-
চিত্তরঞ্জন রেল শহরের তিনটি রেল আবাসনে একের পর এক চুরির ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রেলকর্মীদের বাসভবনে দুষ্কৃতীদের এই নির্লজ্জ কাণ্ড ঘটলেও পুলিশ ও রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) যেন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। তিনটি পৃথক ঘটনায় চোরেদের সাহসিকতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্ন তুলেছে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে আমলাদহি বাজারের কাছে ২৫ নম্বর রোডের একটি রেল আবাসনে। রেলকর্মী আবধেশ প্রসাদ কয়েকদিন আগে বাইরে যাওয়ার সময় তাঁর বাসস্থানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব এক বন্ধুকে দিয়েছিলেন। শনিবার সকালে ওই বন্ধু বাড়িতে এসে দেখেন, দরজার তালা ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং ঘরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড। খবর পেয়ে চিত্তরঞ্জন থানার পুলিশ ও আরপিএফ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তাঁদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো নয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, পুলিশের এই ধীরগতির তদন্ত কেবল সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়।
একই দিনে, ২৩ নম্বর রোডের আরেকটি আবাসনে চুরির ঘটনা ঘটে। রেলকর্মী শ্রীবাস রাও সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার আগে বাড়ি তালাবন্ধ করে যান। দুপুরে ফিরে এসে তিনি দেখেন, দরজা ভাঙা, আলমারি খোলা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র গায়েব। দুষ্কৃতীরা এতটাই নির্ভয়ে কাজ করেছে যে পাড়ার লোকজন কিছুই টের পায়নি। পুলিশ এসে কিছুক্ষণ ঘুরে চলে গেলেও, তদন্তের নামে শুধু খাতায় কলমে কাজ চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
একইভাবে, প্রশান্ত এভিনিউয়ের একটি আবাসনে আরেক রেলকর্মী নারায়ন সাউ বাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। সকালে ডিউটিতে যাওয়ার আগে তিনি দরজায় তালা দিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুরে তাঁর বাড়ির কাজের লোক এসে দেখেন, দরজা খোলা এবং ঘরের ভেতর সবকিছু তছনছ। দুষ্কৃতীরা এতটাই নির্ভয় যে দিনের বেলায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, অথচ পুলিশ বা আরপিএফের কোনো টহল ছিল না।
একই দিনে তিনটি চুরির ঘটনায় শহরে হইচই পড়ে গেছে। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, পুলিশ ও আরপিএফ কী করছে? নিরাপত্তার নামে এই বাহিনীগুলোর উপস্থিতি কেবল কাগজে-কলমে, না কি তারা সত্যিই অপরাধ রোধে কোনো ভূমিকা রাখছে? পুলিশ দাবি করেছে, তারা কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তদন্ত এগিয়ে চলছে। কিন্তু এই ধরনের বারবার চুরির ঘটনায় তাদের এই আশ্বাস শুধুই ফাঁকা কথার মতো শোনাচ্ছে।
শহরের বাসিন্দারা এখন ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। পুলিশ ও আরপিএফের এই নিষ্ক্রিয়তা অব্যাহত থাকলে দুষ্কৃতীদের সাহস আরও বাড়বে, এটা নিশ্চিত। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বাহিনীগুলোর ঘুম ভাঙার সময় এসেছে, নইলে শহর আরও অরাজকতার দিকে এগিয়ে যাবে।