মেয়েদের মাঠ
বর্ষাতি মন (ঝাড়গ্রাম)

মেয়েদের মাঠ ছিল না
ছিল উঠোন — ছোট্ট, প্রাচীর দেওয়া
যেখানে পুতুল সাজিয়ে মেয়েরা
নিজেদের স্বপ্ন পুঁতে দিত মাটির নিচে
সেই মাটির নিচেই
অগণিত কন্যাশিশু ঘুমিয়ে ছিল
যাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়নি কখনও
যাদের জন্মের আগে মৃত্যুর ডাকনাম রাখা হয়েছিল
আজ সেই মাটি মাঠ হয়েছে
ঘাম, লালচে ধুলো, ছেঁড়া স্যান্ডেল
এমনকি হারানো চুলের ক্লিপ পর্যন্ত
গর্বের গন্ধ ছড়ায় বাতাসে
যে মেয়েটিকে বাঁচানো গিয়েছিল কাকতালীয়ভাবে
তার দৌঁড়ে কেঁপে ওঠে হাসপাতালের দেয়াল
তার জয়ে আজ মুখ থুবড়ে পড়ে
লিঙ্গ নির্ধারণের মেশিন
সে আজ বল ছুঁড়ে আকাশ ছোঁয়
বাউন্সারে তার স্বপ্ন লাফায়
উইকেটের শব্দে জেগে ওঠে শহর
মেয়েদের মাঠে এখন সূর্য ওঠে ভোরে
কোনও প্রাচীর নেই
চুল উড়ে যায়, হাঁটু কেটে যায়
তবু খেলা থামে না
যে মা একদিন মেয়ের ব্যাট লুকিয়ে রাখতেন
তিনি আজ বুকের ভেতর একখানা মাঠ অনুভব করেন
জানেন, মেয়ের শ্বাসে এখন
হাজারো হারানো কণ্ঠের প্রতিধ্বনি
আজ স্টেডিয়ামের চিৎকারের ভেতর
একটি মেয়ে বাবার আঙুল ধরে বলছে—
আমিও খেলব একদিন
জেনে রাখো, সেই একদিনই
আবার বদলে দেবে পৃথিবী।

