
চলছে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী: ফাইনাল এক্সপোজার:- ফুটবলের মত দলগত খেলায় মাঠের ভিতরে খেলোয়াররা জেতার জন্য মরিয়া চেষ্টা করে চলে। অন্যদিকে মাঠের বাইরে চলে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। সেখানে দলের কোচ ও তার সহকারীরা বিপক্ষ দলের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য ঘুঁটি সাজায়। আচমকা খেলার ছকে পরিবর্তন আনে অথবা এমন কোনো খেলোয়ারকে পরিবর্তন করে মাঠে আনে যেটা বিপক্ষের সিলেবাসে ছিলনা। ফলাফল সবার জানা। খেলার আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে কোচের বেশ কিছু মন্তব্য বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেয়। বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য অনেক সময় আনফিট খেলোয়ারকে মাঠে রাখা হয়। এসবই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে, চলাকালীন এবং ফল বের হওয়ার আগে এখন চলছে মনস্তাত্ত্বিক চাপের খেলা। প্রতিটি দল সেই খেলায় মেতে উঠেছে। নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হলো - এবার চারশ পার। বিজেপির কোনো নেতার মুখ থেকে এনডিএ শব্দ বন্ধনী শোনা যায়নি। ২০১৯ সাল থেকে একক ক্ষমতায় বলীয়ান বিজেপি নেতৃত্ব শব্দ বন্ধনীটা ভুলে যেতে চেয়েছে। সংবাদ মাধ্যমও বিজেপির কথা উল্লেখ করে। যাইহোক, বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করার এই কৌশল দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে সবাই জিততেই চায়। এখন প্রশ্ন হলো এই নির্বাচনে বিজেপি কি এককভাবে চারশ আসনে প্রার্থী দিয়েছে? যদি না দিয়ে থাকে তাহলে ওত আসনের দাবি ওঠে কি করে? প্রচারের সময় বিজেপির পক্ষ থেকে এনডিএ শব্দ বন্ধনীর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই প্রথম দেখা গেল উত্তরবঙ্গে কোনো কোনো আসনে ভোট পর্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীরা সবুজ আবির খেলায় মেতে উঠেছে। অথচ এই এলাকায় তৃণমূল যথেষ্ট দুর্বল। তারপরও এই আবির খেলাটা অবশ্যই ভাবনার খোরাক যোগাবে। এটাও কিন্তু বিপক্ষের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করার একটা নতুন কৌশল। এর আগে কখনোই এটা দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই বিপক্ষের কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়বে। এর প্রভাব পরবর্তীকালে প্রতিবেশি আসনের নির্বাচনের উপর পড়তে পারে। বর্তমানে স্যাফোলজিস্ট অর্থাৎ জনমত সমীক্ষকদের বিশ্লেষণ কতটা বিশ্বাসযোগ্য অবশ্যই ভাববার বিষয়। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে একদল স্বঘোষিত জনমত সমীক্ষক বিভিন্ন দলের স্বপক্ষে এমন সব সংখ্যা সামনে আনছে পরে বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল থাকছেনা। বিশ্লেষণের সময় সামান্য পার্থক্য হতেই পারে কিন্তু বিপুল পার্থক্য তাদের নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলে দেবেই। বলে দেওয়া ভাল, বুথ ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল অনুমান মাত্র প্রমাণ নয়। হুবহু মিলে যাবে এটা আশা করা ভুল। যদি কখনো মিলে যায় সেটা কাকতলীয় বলাই ভাল। তাই চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করাটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের মত চ্যানেলগুলোও বলে দেয় এটা আভাস মাত্র চূড়ান্ত ফল নয়। তাসত্ত্বেও নির্বাচনের ফল বের হওয়ার আগে বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষের একটা আগ্রহ থেকেই যায়। অনেকেই মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন সংস্থার এক্সিট পোল দেখে, বিশ্বাস করে। পরে ট্রেনে, বাসে, চায়ের আড্ডায় এটা নিয়ে আলোচনা করে। তাই এটার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা উচিত। হতে পারে এই এক্সিট পোল চূড়ান্ত ফল বের হওয়ার আগে দেশের শেয়ার বাজার সহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চাঙ্গা রাখতে পারে। যেদলই ক্ষমতা লাভ করুক এটা কিন্তু দেশের স্বার্থে খুবই জরুরি। এখন বিভিন্ন সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষা সন্দেহের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষার মধ্যে বিপুল পার্থক্য দেখলে মনে হবে কোনো একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এইসব সমীক্ষা করা হয়েছে। অথচ এইসব সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। মানুষের লোভের হাতে পড়ে বিজ্ঞান লজ্জায় মুখ লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাইতো এগুলো দেখে মনে হয় সব 'পেড' সমীক্ষা। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে বিপক্ষকে চাপে ফেলার নিম্নমানের কৌশল। সেক্ষেত্রে গণনার দিন বিপক্ষের কাউন্টিং এজেন্ট নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে গণনা কেন্দ্রের ভিতর যেতে ভয় পাবে। রাজনৈতিক দলগুলো বিপক্ষকে চাপে ফেলার জন্য এই কৌশল নিতেই পারে। কিন্তু কোনো মিডিয়া হাউসের কি সেটা নেওয়া ঠিক হবে? মাথায় রাখতে হবে আমাদের দেশে এমনিতেই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের বিশ্বাসযোগ্যতা আজ তলানিতে ঠেকেছে। যাইহোক, মাঝে মাত্র আর কয়েকঘণ্টা বাকি। তারপরই চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে। যে দলই এইরাজ্যে বেশি আসন পাক আশা করা যায় ২০১৯ এর লোকসভা বা ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের ফল বের হওয়ার পর এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে হিংসাত্মক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটবেনা। অথবা দেশের কোথাও কারও উপর নেমে আসবেনা আক্রমণ। নেতাদের খুশি করতে গিয়ে বলির পাঁঠা হতে হয় সাধারণ মানুষকে।