মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ

মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদ

রক্তিম সিদ্ধান্ত: মুর্শিদাবাদ:-  মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন কাটরা মসজিদ। মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে কাটরা মসজিদ অবস্থিত। নিয়মিত শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন মসজিদটি দেখতে। মসজিদের প্রধান প্রবেশ দ্বারে ঢুকতেই চোখে পড়ে গাছ গাছালির আচ্ছাদিত সবুজ বাগান। দুই পাশের দুই উঁচু বুরুজ স্বাগত জানায় দর্শনার্থীদের।

প্রবেশ পথেই লাল ইটের চোখ জুড়ানো স্থাপনাটি দেখে অবাক হয় দর্শনার্থীরা। ঢাকা থেকে ১৭১৭ সালে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেন নবাব মুর্শিদকুলি খান। তার নামানুসারে নতুন রাজধানীর নাম হয় মুর্শিদাবাদ। কাটরা মানে বাজার। নবাব মুর্শিদকুলি খানের ইচ্ছা অনুযায়ী বাজারের মধ্যে নির্মাণ করা হয় মসজিদ।

কাটরা মসজিদটি নতুন রাজধানীর জামে মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয়। বৃদ্ধাবস্থায় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁন তার কবর একটি মসজিদের পাশে হোক ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি মসজিদটি নির্মাণের দায়িত্ব দেন বিশ্বস্ত কারিগর মুরাদ ফরাস খাঁনের উপর।

মসজিদটি মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশনের ১৬০০ মিটার পূর্ব দিকে বাজারের মধ্যে অবস্থিত। এটি ১৭২৩ থেকে ১৭২৪ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। এখানে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁনের সমাধি রয়েছে। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম কাফেলা কেন্দ্রের একটি। মসজিদের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল দুই কোনার উঁচু দুটি টাওয়ার, যেগুলোতে বন্দুক স্থাপনের জন্য ছিদ্র রয়েছে।

মসজিদটি চতুর্ভূজাকৃতির। সামনের দিকে রয়েছে পাঁচটি প্রবেশ খিলান। সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতেই চোখে পড়বে পাঁচটি গম্বুজ। চার কোণে চারটি বুরুজ। সিঁড়ি বেয়ে বুরুজের উপর পর্যন্ত যাওয়া যায়। মসজিদের সামনের বুরুজ বা টাওয়ারগুলো ৭০ ফুট উঁচু এবং প্রায় ২০ ফুট চওড়া। মসজিদটি ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে পশ্চিম পাশের দুটি বুরুজ আছে। এখন সিঁড়ি বেয়ে এসব বুরুজে উঠা নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, কাটরা মসজিদের কক্ষগুলি মাদরাসা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সর্বমোট ১৫টি মিহরাব রয়েছে মসজিদটির পশ্চিম দেয়ালে। মসজিদের কক্ষে প্রায় ৭শ’ লোক কোরআন পড়তে পারত। মসজিদে ২ হাজার নামাজ এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হতো।

নবাব মুর্শিদকুলি খানের কবর রয়েছে মসজিদে প্রবেশ তোরনের নিচে। তার ইচ্ছা অনুসারে তাকে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। তিনি চেয়েছেন তার কবর এমন একস্থানে হোক যেখানে তিনি মসজিদে প্রবেশকারী পূণ্যবান লোকের পদস্পর্শ পান। সেভাবেই তাকে কবর দেয়া হয়। 

বর্তমানে কাটরা মসজিদের তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব আর্কিওলজিক্যাল সারভে অব ইন্ডিয়া। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দর্শনার্থীদের চোখ ভরা প্রাপ্তির হাসি নিয়েই ফিরতে হয় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁনের অনন্য স্থাপনা কাটরা মসজিদ দেখে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )