পিশাচের কালো হাত

পিশাচের কালো হাত

রাকা ভট্টাচার্য্য (কলকাতা)

মেয়েটা প্রথম হ’ত,
তাই প্রথমেই ভালোবাসতেন প্রধান শিক্ষিকা, মেয়েটা টিফিনের ভাগ দিত, সবাই তার বন্ধু, মেয়েটা অকারণে ফিক করে হেসে দিত চুপি চুপি
তাই দিদিমণি নাম রেখেছিলেন সরলা।
মেয়েটা দোলনা, মেয়েটা রবীন্দ্রসঙ্গীত।

মেয়েটা তার বাবাকে শৈশবী বোলে বলেছিল —
‘বাবা আমি ডকতর হব’ —,
মেয়েটার মা তার নির্ঘুম আকাশে বুনে দিয়েছিল
স্বপ্নের এক একটি নক্ষত্র —
স্টেথো, সিরিঞ্জ, সিজার আর সাদা এ্যাপ্রন ….,

মেয়েটা একদিন ভোরে হাসপাতালের করিডোরে
স্টেথো হাতে আলো মেখে হাঁটছিল,
তার বিজয়ী পদধ্বনি ঘরে বসে শুনেছিল মা, তার আলো ছুঁয়েছিল বাবার উন্নত বুক। মেয়েটা অনেকদিন মার কোল ঘেঁষে ঘুমায়নি।

মেয়েটা ঘুমালো।
মেয়েটা আলো ধুয়ে মুছেছিল রোগীদের বুক, টোল পড়া গালে হেসে বলেছিল ‘সবাই সুস্থ হয়ে যাবে’….
তারপর কর্কট রাতের আঁধারে অসুস্থ সমাজের আঁচল জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে …..
জানত না ওঁৎ পাতা জালে সন্ধানী বৃশ্চিকের পিশাচ
দংশনে ছিন্ন লাশ হবে মেয়ে।

একটা রক্তাক্ত ভোর–, হাসপাতাল!
নরক রাতের শেষে ঝুলছে রক্তমাখা সাদা এক চাঁদ।
দুলছে অবক্ষয়ী সমাজের বিচারের কালো পেণ্ডুলাম….।

মেয়েটা এখন বিকেলের মিছিল,
মেয়েটা এখন সহস্র সহস্র দগ্ধ গলিত মোমবাতি।
শুধু মা জানে মেয়েটার জন্মদিন আর জন্মানোর দাগ।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )