সকাল থেকেই তর্পনের উদ্দেশ্যে দামোদর ঘাটে সাধারণ মানুষের ভিড়

সকাল থেকেই তর্পনের উদ্দেশ্যে দামোদর ঘাটে সাধারণ মানুষের ভিড়

রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী: আসানসোল:-

আজ পিতৃপক্ষের আবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা।সেই মতো আসানসোলের বিভিন্ন নদীঘাট গুলোতে তর্পনের ছবি দেখা গেলো।আসানসোলের দামোদর নদীর ডিসেরগড় ঘাটে ও বার্নপুরে পিতৃ পুরুষের উদ্যেশে তর্পন করতে দেখা গেলো।
আজ মহালয়া পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচলিত আছে। এই দিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। এই মর্মে আজ সকাল থেকেই তর্পণের উদ্দেশ্যে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বিভিন্ন নদীঘাট গুলোতে তর্পনের ছবি দেখা গেলো তর্পনের উদ্দেশ্য আসা দামোদর নদীতে সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আজ অর্থাৎ মহালয়ার দিন দেবতা, ঋষি বা পিতৃপুরুষদের কাছে পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করতে কালো তিল মিশ্রিত জল নিবেদনের মধ্যে দিয়ে তর্পণ করেন অসংখ্য মানুষ। দামোদর নদীতে জল বেশি থাকার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ ও এনডিআরএফ এর তরফে নজরদালি চালানো হয়।

মহালয়ার কিছু কথা..

সনাতন হিন্দু শাস্ত্রে তিনটে ঋণের কথা বলা হয়েছে- দেবঋণ, ঋষিঋণ, পিতৃঋণ। এই ঋণত্রয় পরিশোধ না করলে মৃত্যুর পরে আত্মার সদ্গতি লাভ হয় না। বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, পিতৃপক্ষের উদয়কালে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণাদি করলে পিতৃঋণ হতে মুক্ত হওয়া যায়। আজ থেকেই সেই পিতৃপক্ষের সূচনা।
পিতৃপক্ষকে “ষোড়শ শ্রাদ্ধ” এবং “অপরাপক্ষ-ও” বলা হয়। আশ্বিনমাসের কৃষ্ণপক্ষটিই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত; যে অমাবস্যায় পিত্রিপক্ষের অবসান হয়, তাকে “মহালয়া অমাবস্যা” বা “সর্বপিতৃ অমানিশা” বলে। পুরাণ অনুযায়ী দেহত্যাগ হওয়ার পর আত্মা স্বর্গ ও ভূলোকের মধ্যস্থলে অবস্থিত পিতৃলোকে গিয়ে পৌঁছয়। পরবর্তী প্রজন্মের কেউ দেহত্যাগ করলে তখন পূর্ববর্তী আত্মারা পিতৃলোক ত্যাগ করে ঊর্ধ্বলোকে গমন করে। পিতৃপক্ষের আরম্ভলগ্নে সূর্য যখন তুলা রাশিতে প্রবেশ করে, তখন পিতৃলোকবাসী পূর্বপুরুষের আত্মারা গৃহে অবতরণ করেন এবং সূর্য পরবর্তী রাশিতে (বৃশ্চিক) না যাওয়া পর্যন্ত গৃহেই বাস করেন। তাই প্রত্যেক সনাতন ধর্মাবলম্বীর একান্ত কর্তব্য, সেই সময় যথাযথ নিয়মাবলী মেনে পিতৃগণের তৃপ্তি হেতু তাঁদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা।
মহাভারতে উল্লেখিত কর্ণ মৃত্যুর পরে যমলোকে গিয়ে ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে খাদ্য ভিক্ষা চেয়েছিলেন। যম বললেন, যেহেতু মর্ত্যে থাকাকালীন কর্ণ অজস্র ধনরত্ন দান করেছেন, কিন্তু পিতৃশ্রাদ্ধ করেননি, তাই পরলোকে তাঁর এই খাদ্যাভাব। কর্ণ বললেন, তিনি জানতেন না তাঁর পূর্বপুরুষ কে। তাই তাঁর পক্ষে তর্পণ করা সম্ভবপর হয়নি। করুণাবশত যম একপক্ষকালের (১৫ দিনের) জন্য কর্ণকে দেহ ফিরিয়ে দিলেন এবং কর্ণ মর্ত্যে এসে এই পিতৃপক্ষেই শাস্ত্রানুযায়ী পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান আদি পালন করে পুনরায় স্বর্গে ফিরে গেলেন। তাই বিদেহী পূর্বপুরুষদের আত্মার তৃপ্তি কামনা করে এই সময় জলদান অবশ্য কর্তব্য।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )