রাইপুরের রাজবাড়ি থেকে রাজলক্ষ্মী এলেন মহামায়া মন্দিরে

রাইপুরের রাজবাড়ি থেকে রাজলক্ষ্মী এলেন মহামায়া মন্দিরে

সৌমী মন্ডল, রাইপুর, বাঁকুড়া:- দক্ষিণ বাঁকুড়ার রাইপুর থানার চাঁন্দুডাঙ্গা গ্রাম। এখানকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস জাগ্রত দেবী মা মহামায়া এখানেই অধিষ্ঠান করেন। বিশ্বাসের পেছনে আছে এক অলৌকিক কাহিনী। একবার এই গ্রামের আলম সায়ের পুকুর পাড় ধরে যাওয়ার সময় জনৈক শাঁখারী এক কুমারী মেয়েকে শাঁখা পরিয়ে দিলে মেয়েটি শাঁখারীকে বলেছিলেন, আমি সাধুবাবার কন্যা। তুমি বাবাবাকে গিয়ে বলো কুলুঙ্গিতে টাকা রাখা আছে। শাঁখার মূল্য হিসাবে সেটা যেন তাকে দেওয়া হয়। শাঁখারী সাধু বাবার কাছে গিয়ে সে কথা বলতেই সাধুবাবা অবাক হয়ে যান। তিনি শাঁখারীকে ধমক দিয়ে বলেন, আমি সাধু মানুষ। সংসার, পরিজন আমার নেই। কি করে আমার মেয়ে থাকতে পারে ? এরপর তিনি শাঁখারীকে বলেন, আমাকে সেই জায়গায় নিয়ে চলুন যেখানে আপনি মেয়েটিকে শাঁখা পরিয়েছিলেন। সাধুবাবা সহ শাঁখারী পুকুর পাড়ে এসে দেখেন সেখানে সেই মেয়েটি নেই। শাঁখারী তখন কাঁদতে শুরু করেন এবং বলেন - মাগো, আমায় দ্যাখা দাও মা। হঠাৎ দ্যাখা যায় শাঁখা পরিহিতা কোনো এক শক্তি পুকুরের মাঝে দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সাধুবাবা সব বুঝতে পারেন। বাড়ি ফিরে সাধুবাবা কুলুঙ্গিতে থাকা টাকা নিয়ে শাঁখার দাম শাঁখারীকে বুঝিয়ে দিতে গেলে শাঁখারী সেটা নিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি প্রতিবছর এই মন্দিরে এসে দুর্গাপুজোর সময় একজোড়া শাঁখা দিয়ে যাব। সেই নিয়ম মেনে বিষ্ণুপুর থেকে একজন শাঁখারী এসে শাঁখা দিয়ে যান। এসব প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা।

ষষ্ঠীর দিন বিকেলে নিয়ম মেনে যথাযোগ্য মর্যাদায় শোভাযাত্রা সহকারে মাকে দোলায় চাপিয়ে খোল করতাল বাজিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে প্রায় পাঁচ কিমি. পথ অতিক্রম করে মাকে নিয়ে আসা হয় চাঁন্দুডাঙ্গা গ্রামের মহামায়া মন্দিরের বেল তলায়। সেখান থেকে মহাসপ্তমীর দিন মা’কে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দশমী পর্যন্ত তিনি পুজো পান। দশমীর দিন আবার একইভাবে রাজলক্ষ্মীকে মহামায়া মন্দির থেকে হরিহর গঞ্জগরের রাজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। পরবর্তী দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত সেখানেই তিনি অধিষ্ঠান করবেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রাইপুর রাজবাড়িতে সাজো সাজো রব। মাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রথা অনুযায়ী কামান দাগা হয়। মায়ের সাথে থাকেন অগণিত ভক্তবৃন্দ। রাজবাড়ীর প্রথা অনুযায়ী তলোয়ার, কাটান মশাল, পাখা সহ রাজবেশে কয়েকজন সৈনিক থাকেন। এই চান্দুডাঙ্গা গ্রামে মা মহামায়ার নিত্য পুজো হয়। দক্ষিণ বাঁকুড়ার জাগ্রত দেবী বলে পরিচিত মা মহামায়া। প্রতিদিন এখানে কয়েকশ' ভক্ত পুজো দিতে আসেন। প্রসঙ্গত এখানে প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করে জেলার সর্ববৃহৎ ও উচ্চতম মন্দির নির্মাণ হচ্ছে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (1 )