পুলিশ হলেও ওরাও মানুষ

পুলিশ হলেও ওরাও মানুষ

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, ফাইনাল এক্সপোজার -: শেষ হলো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের ভিড়ে প্যাণ্ডেলগুলো উপচে পড়ছে। একদল সমস্ত নতুন পোশাক পরে সেজেগুজে পরিবারের সদস্যদের হাত ধরে এক প্যাণ্ডেল থেকে অন্য প্যাণ্ডেলে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার রেস্টুরেন্টে বসে সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে ঠাকুর দ্যাখার আলোচনায় মশগুল। কিন্তু ওদের জীবনে বসন্তের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ আসেনা। শুধুই শীতের শুষ্কতা, রুক্ষতা বিরাজ করে ওদের মনে। সাধারণ মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ঠাকুর দ্যাখার আনন্দ উপভোগ করতে পারে তারজন্য ওরা তখন শান্তিরক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকে। 'পান থেকে চুন খসলেই' আক্রমণের ঝড় নেমে আসবে ওদের দিকে। প্রশ্নের পর প্রশ্নে ওদের জর্জরিত হতে হবে। ঠাকুর দেখতে গিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে নাবালিকা প্রেমিকা ক্যানো পালিয়ে যাবে, মদ খেয়ে একদল যুবক ক্যানো মাতলামি করবে ইত্যাদি সব প্রশ্নের উত্তর ওদের রাখতে হবে। কারণ ওরা পুলিশ। ওদিকে ওদের কারও বাড়িতে স্বামীর হাত ধরে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হয়না সন্তানদের। অসহায় ভাবে তারা বাবার হাত ধরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে থাকে।পুজোর সময় বৃদ্ধ মা-বাবা কাছে পাননা তাদের সন্তানকে। প্রতিবেশীরা যখন পুজোর আনন্দে মেতে উঠছে ওদের মন তখন বোবা কান্নায় ভেঙে পড়ে। হাসির অন্তরালে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে কান্নাকে। কষ্ট হলেও পুলিশ পরিবারের সদস্যদের প্রকাশ্যে চোখের জল ফেলতে নাই! পরাধীন ভারতে ব্রিটিশরা বিপ্লবীদের দমন করার লক্ষ্যে পুলিশ ব্যবস্থা চালু করে। স্বাধীন ভারতে আশা করা হয়েছিল পুলিশ কেবল অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে। কারণ সমাজে ভাল মন্দ সব ধরনের মানুষ বাস করে। তারা হয়ে উঠবে প্রকৃত সমাজবন্ধু। কিন্তু মানুষ অবাক হয়ে দেখল পুলিশ হয়ে উঠেছে শাসকদলের হাতের পুতুল, তাদের ক্ষমতা দখলে রাখার অস্ত্র। বিভিন্ন রাজ্যে শাসকদল যত জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে তত তাড়া পুলিশ প্রশানকে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে একের পর এক বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। বিরুদ্ধে কথা বললে সাধারণ মানুষের কপালেও একই দুর্দশা জুটছে। কিন্তু শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অপরাধীরা ছাড় পারছে। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভাবা হয়েছিল এবার হয়তো পরিস্থিতির কিছুটা বদল হবে। কিন্তু নুন্যতম পরিবর্তন হয়নি। যত সময় এগিয়েছে সরকার তত বেশি পুলিশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একসময় যে পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলুনীয় ছিল তাদের পরিচয় হয়ে ওঠে দলদাস, ঘুষখোর। জনসংযোগ বাড়লেও তৃণমূল আমলেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। খাকি পোশাক দেখলে মানুষ যখন ঘাবড়ে যেত তখন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিককে আঙুল তুলে প্রকাশ্যে শাসানি দিচ্ছে তৃণমূল নেতা। সব বুঝেও নীরব থাকতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হওয়া সত্ত্বেও শুধু এইরাজ্যে নয় দেশের অন্যান্য রাজ্যেও পুলিশ বড় অসহায়। আদালত নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পুলিশ অপরাধী মন্ত্রী পুত্রকে গ্রেপ্তার করতে পারেনা। কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্থা করলেও পুলিশ অপরাধী সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ পুলিশ ঘুষ নেয়। কোন পেশায় ঘুষ নেওয়া হয়না? সামান্য একটা সার্টিফিকেট নিতে গেলেও ঘুষ দিতে হচ্ছে। অথচ পুলিশকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে দেশের কোনো শাসকদল অর্থবহ কোনো ভূমিকা নেয়নি। নিয়োগ কর্তার অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে। তাদের উপর শারীরিক আক্রমণ নেমে আসছে। সম্প্রতি কলকাতায় একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে একজন পুলিশ আধিকারিকের চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মহিলা পুলিশ কর্মীর রক্ত ঝরেছে। ওরাও তো মানুষ, আমাদের পরিবারের সন্তান। সমস্ত অপমান সহ্য করেও তারা হয়ে উঠেছে নীলকণ্ঠ। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে কবে?

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )