
আমি মানুষ হবো
সমীর পণ্ডিত (ইন্দাস, বাঁকুড়া)
মা….,
বাবাকে একটু বলো..,
আমাকে একটি বর্ণপরিচয় কিনে দিতে।
ঐ যে দূরে ইস্কুলের গাড়িতে চড়ে শিবু, রামু, ফতেমা, সিরাজ শহরের ইংরেজি স্কুলে পড়তে যাচ্ছে।
সেদিন দাদু বলছিল..
ওখানে পড়লে মাসে মাসে অনেক টাকা লাগে,ওসব বড়লোক ছেলে মেয়েদের ইস্কুল।
আমরা তো গরীব..,
আমি গ্রামের সরকারি ইস্কুলে
পড়তে যাবো মা।
জানো মা….আমারও ইচ্ছে হয় …
আমিও সকালে উঠে পড়তে বসবো।
একটু বেলা হলেই…..
গায়ে মাথায় খাঁটি সরষের তেল মেখে তাল পুকুরে চান করে
ইস্কুলে যাবো।
আমিও শিখতে চাই মা।
সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।
বাবুদের ছেলে মেয়েদের মত আমরাও মাথা উঁচু করে বাঁচবো।
কেউ অশিক্ষিত বলে আর আমাদের অপমান করবে না।
নাইবা তোমরা লেখা পড়া জানলে,
আমি জানবো ..
আমি শিখবো।
আমাদের সমাজকে বুঝবো।
তোমরা জানো …
আমাদের খুব অভাব।
এক চিলতে মাটির ঘর, খড়ের ছাউনী।
বর্ষাকালে বৃষ্টির জল ফোঁটা ফোঁটা মেঝেতে পড়ে।
শীতে আমাদের ঢাকা নেওয়ার মতো কিছুই নাই।
আমার ভালো সোয়েটার নাই।
ওসব নাই থাকুক……
আমার কিছুই ওসব দরকার নাই ।শুধু একটি বর্ণপরিচ়য় কিনে দাও।
আমি সবদিন সময়ে পেটভরে খেতে পায়না।
কি করে পাবো??
আসলে বাবা যা কাজ করে বেতন পায় তার সবটাই মদ খেয়ে নেশা করে শেষ করে দেয়।
মা…, তুমি লোকের বাড়িতে কাজ করলেও …তুমি পারবে ।
তুমি যে মা……!!!
জানো মা…,.আজকাল
ইস্কুলে গেলে জামা প্যান্ট পাবো,জুতো পাবো।
নাচ শিখবো,গান শিখবো,ব্যায়াম করবো,কবিতা বলবো…,
বল খেলবো…।
আর… আর জানো মা,
দুপুরে অন্তত মিড ডে মিলে দু মুঠো খেতে পাবো।
ঘরে তো সব দিন পেট ভরে খেতেই পাইনা।
দাওনা মা ….
আমাকে একটি বর্ণপরিচ়য় কিনে।
ও মা ….মা ….,
ও মা…,!!!
দাওনা আমাকে একটি বর্ণপরিচয়।
তোমার কাছে টাকা না থাকলে
বাবাকে একবার বলো ….,
আমাকে একটা বর্ণপরিচয় কিনে দিতে।
আমিও লেখা পড়া শিখতে চাই ।
আমিও বড়ো হয়ে চাকরি করতে চাই।
বড়ো হয়ে তোমাকে একটি দামী শাড়ি কিনে দেবো ।
বাবাকে জামা প্যান্ট
বোনের জন্য লাল ফ্রক।
একটি ছোট্ট ঘর।
বোনের ভালো ঘরে বিয়ে ..;
সব সব আমি দায়িত্ব নেবো।
লেখা পড়া শিখলে সব করতে পারবো মা।
আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করে দাও।
আমিও বাবুদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের মত পিঠে ব্যাগ নিয়ে ইস্কুলে যাবো।
আমিও মানুষ হবো।