উপায়ান্তর (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
মুনমুন মুখার্জ্জী (বার্ণপুর, পশ্চিম বর্ধমান)

"ও সনৎদা, অনেক দিন হলো ফিস্ট করা হয়নি, চলো একদিন করা যাক।"
–“করলেই হয় ব্যানার্জ্জীদা, আগে তো প্রায়ই হত। আর রাজনৈতিক বন্ধ থাকলে তো কথাই নেই। ভাই প্রিয়াংশু এসবের কিছুই জানে না।”
প্রিয়াংশু বলেন, “বন্ধের দিন ফিস্ট, সেটা কি রকম?”
সনৎ বাবু বলেন, “আরে ভাই আমরা ছা-পোষা মানুষ। বন্ধের দিন ঘরে বসে থাকলে চলবে? কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধীরা সরকারকে চাপ দিতে তখন প্রায় বন্ধ ডাকত। যদি বন্ধ চলাকালীন কেউ ঘর থেকে বের হত তবে রীতিমতো জুলুম করত তারা..”
-“হ্যাঁ জানি, বন্ধ এলেই আমাদের বেশ মজা হত। অলিখিত ছুটি। স্কুল কলেজে কেউ যেতাম না। বকাও খেতাম না। এখন দেখছি আমাদের চেয়ে আপনারাই বেশি আনন্দ করতেন। একেবারে একসাথে খাওয়া দাওয়া?”- প্রিয়াংশু অবাক হয়ে বলেন।
“আরে ভাই, আমরা ফিস্ট করতাম কি আর সাধে? বন্ধের সময় কারখানা না এলে ডবল মাইনে কাটা যেত, আর এলে ডবল দেওয়া হতো। ভয়ে সেদিন তো আসতে পারতাম না, তাই তার আগের দিন রাতেই কারখানায় চলে আসতাম। বাসনপত্র, চাল, ডাল, তেল, সব্জি সব রকম নিয়ে আসতাম। টানা দু’দিন থেকে ডিউটি করে তারপর ঘরে ফিরতাম। তোমার এটা আনন্দ মনে হচ্ছে ভাই? আসলে আমাদের কাছে উপায় ছিল না ভাই।”- বললেন ব্যানার্জ্জী বাবু।
“জানো ভাই প্রিয়াংশু, আমি একবার বন্ধের দিন এ-সিফ্ট ডিউটি করতে এসেছিলাম সাইকেলে চড়ে, বন্ধ সমর্থকরা যে কতটা উগ্র হতে পারে তার আগে আমার ধারণা ছিল না। সেদিন কারখানার গেটের বাইরে বন্ধ সমর্থকরা আমাকে প্রচন্ড মারধোর করে, সাইকেলের পাম্প খুলে রিম বেঁকিয়ে যাচ্ছেতাই কান্ড করে। তারপর থেকেই আমরা বন্ধ হবে শুনলেই কারখানার ভিতরেই খাবার ব্যবস্থা আগে থেকে জোগাড় করে রাখতাম। যে যার নিজের সিফ্টে ডিউটি করতাম, বাকি সময় খাওয়া দাওয়া করতাম সবাই মিলে একসাথে। এমন কি যাদের রাত ডিউটি থাকত না তারা ঘুমানোর ব্যবস্থাও করে রাখতাম।”- সনৎ বাবু বললেন।
প্রিয়াংশু বলেন,- “তাই তো, এ তো একরকম অত্যাচার। প্রতিবাদ করা সবার মৌলিক অধিকার, তার জন্য ধর্মঘটও ডাকা যায়, তবে মানা না মানাও আমাদের ইচ্ছের উপরেই ছাড়া উচিত। জোর করে ধর্মঘট সফল করার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই।”
“সেটা আর কে বোঝে ভাই? ছাড়ো ওসব কথা। ফিস্ট করার জন্য একটা দিন ঠিক করো, সবাই মিলে একটু হইহই করা যাবে। কি বলো?”
“একদম সনৎদা, চলুন সবার সঙ্গে আলোচনা করি…” সবাই একসাথে গলা মিলিয়ে বলে উঠল।