দুর্গাপুরে ভিড়িঙ্গি শ্মশানকালীর পুজোয় মেতে উঠল ভক্তরা

দুর্গাপুরে ভিড়িঙ্গি শ্মশানকালীর পুজোয় মেতে উঠল ভক্তরা

সঙ্গীতা মুখার্জ্জী মণ্ডল, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান-: এইরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে আছে অসংখ্য কালীঠাকুর- তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, নৈহাটির বড়মা, তকিপুর ইত্যাদি। ভক্তদের কাছে তাদের তাৎপর্য আলাদা। এরকমই একটি কালীঠাকুর হলেন ভিড়িঙ্গি শ্মশানকালী। বিহারের নাগাবাবা তুলসীদাসজী ও তাঁর শিষ্য 'সিদ্ধ তান্ত্রিক' অক্ষয় কুমার রায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় ভিরিঙ্গি গ্রামের শ্মশান ঘাটের পাশে ১৮৫২ খ্রী. (বাংলার ১২৫৯ সাল) এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নাগাবাবার ইচ্ছানুসারে পঞ্চমুন্ডির আসনে দেবীমূর্তি স্থাপন করা হয়। মন্দিরটি ৪ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। অগ্রহায়ন মাসের গভীর রাতে এই মায়ের পুজো হয়। 'সিদ্ধতান্ত্রিক' শ্রী শ্রী অক্ষয় কুমার রায়, 'তন্ত্রকাচার্য' শ্রী শ্রী জগদীশ চন্দ্র রায়, শ্রী শ্রী অবনীকান্ত রায়, 'গুরুদেব' শ্রী শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় মন্দিরের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। সম্প্রতি হাজার হাজার ভক্তদের উপস্থিতিতে মায়ের ১৭৩ তম বাৎসরিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শ্মশানের আধ পোড়া কাঠ দিয়ে মায়ের মহাযজ্ঞ হয়। এখানে নাগাবাবাকে আগে ভোগ নিবেদন করা হয়। কারণ তিনিই এই চত্বরকে সাধনক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। এখানে মায়ের বিসর্জন নেই, পুজোর দিন সকালে মায়ের মূর্তি বদল করা হয়। সেই সময় প্রতিবছর নিজে থেকেই পঞ্চশূল কেঁপে ওঠে যেটা দেখতে মন্দির চত্বরে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। প্রসঙ্গত এই পঞ্চশূল বৈদ্যনাথধামের পাশাপাশি একমাত্র ভিড়িঙ্গি কালীমন্দিরে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এবং অমবস্যায় মন্দিরে নিশিপুজো দিতে ভক্তদের ঢল নামে। পাঁচ পুরুষ ধরে মা'কালীর মূর্তি গড়ছেন আমবাইয়ের সূত্রধর পরিবার। এখনও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। বর্তমানে জয়রাম সূত্রধর ও তাঁর আত্মীয় পরিজনরা এই মূর্তি গড়েন। একইভাবে ভিড়িঙ্গির হালদার পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই এখানে বলিদান করে আসছেন। অষ্টমঙ্গলার দিন নরনারায়ণ সেবার আয়োজন করা হয়। রায় বাড়ির অন্যতম সদস্য সাধন কুমার রায় হলেন এই মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত। তিনি বললেন, প্রতি অমাবস্যার রাতে পাঁচ শতাধিক শিষ্য মায়ের পুজো ও হোমের পরে প্রসাদ গ্রহণ করেন। তিনি আরও বললেন বার্ষিক পুজোর দিন পুজো পাঠ, হোম-যজ্ঞ করা হয় এবং ৩০ সহস্রাধিক শিষ্য মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেন এবং লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়। শুধু স্থানীয় নয় দূরদূরান্ত থেকেও ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন। ভিড়িঙ্গির শ্মশানকালী সম্পর্কে গবেষণামূলক তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন দুর্গাপুরের বামুনাড়ার বাসিন্দা ভবানী ভট্টাচার্য্য। তিনি বললেন, এই কালীমায়ের মাহাত্ম্য রাজ্যের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। মায়ের প্রসাদ গ্রহণের জন্য ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন। দিন দিন যেভাবে ভক্তদের ভিড় বাড়ছে তাতে এই শ্মশানকালীমাকে কেন্দ্র করে আগামীদিনে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )