আমি জয়দ্রথ প্রেয়সী দুঃশলা

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

আমি কি হেরেছি জয়দ্রথ আমি কি হেরেছি প্রেম প্রতিদানে?
গান্ধারী কন্যা আমি পিতা মহা প্রতাপশালী রাজা ধৃতরাষ্ট্র,
ঐশ্বর্যের অগাধ ভান্ডার হস্তিনাপুরের একমাত্র রাজকন্যা
কৌরব,পাণ্ডব ভ্রাতাকুল মাঝে অতি স্নেহে লালিতা পালিতা যে নন্দিনী সে কি পারে পরাজিতা হতে??
হৃদয়ের রুক্ষতা দেখেছো
দেখোনি ফল্গু সম সমাহিত কোমলতা
বহু পুরুষ উপেক্ষা করে যে বরমাল্য দিতে জানে নিজ কাঙ্খিতজনে
সে নয় শুধু অহংকার দোষে দুষ্ট সে যে অতিব হৃদয়শিলা,
সবাই দেখেছে কথায় কথায় তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করা নারী
বোঝেনি তা ছিলো দুর্বল স্বামীকে অপমানের প্রবল যন্ত্রণা
যতবার তোমাকে ছুঁতে চেয়েছি আমি ভালোবাসার অহংকারে
ততবারই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আত্মীয় পরিজন দ্বারা তোমাকে করা অবহেলা,
প্রেয়সী আমি, নিজের সম্পদ ভেবে আঘাতে আঘাতে করেছি জর্জরিত
নিভৃতে সে আঘাত দ্বিগুণভাবে বিঁধেছে এ বুকে,
কখনও দেখোনি খুঁজে, হয়তো দেখতেও চাওনি আমার বেদনা
দীর্ঘ বিরহের পর শিবকালী তীর্থ থেকে ফিরে আসার মুহূর্তে
জমাটবদ্ধ অভিমানে পারিনি তোমায় আলিঙ্গনাবদ্ধ করতে,
হে সিন্ধুরাজ তুমি ভেবেছো তা নিতান্তই অবজ্ঞা
সে যে প্রেম ছিলো প্রিয়, ছিলো কাছে চেয়ে না পাওয়ার অভিমান
বহু নারীর বক্ষ লগ্ন তুমি তোমার কামনায় পায়নি ছাড় দাসীও
এ কি নয় আমার চরম অপমান?
সে অপমানে আহত হয়ে যতই থেকেছি দূরে ততই মনের অন্তঃপুরে প্রেমের শিকড় হয়েছে রচনা,
জীবৎকালে যাঁকে প্রতিনিয়ত সরিয়েছি দূরে
তার‌ই প্রাণ সংশয়ে জেনে কেঁদেছে হৃদয় অকাতরে,
যখন অভিমুন্য বধের সাহসিকতায় ভ্রাতা গণ তোমায় ঘিরে ছিলো আনন্দেমগ্ন
অর্জুনের প্রতিশোধের আগুন তোমায় ছারখার করে দেবে ভেবে কৃষ্ণার্জুনের শরণাপন্ন এই আমি
অহংকারী,স্বাধীনচেতা, রাজনন্দিনী, উন্মাদিনী ভিক্ষারিণীর মতো ছুটেছি কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে,
যুদ্ধক্ষেত্রে তোমার পরাজয় জেনে যে নারী ঈশ্বরের কাছে বারবার করেছে প্রাণদানের সাধনা
চির উন্নত মস্তক পাণ্ডবের পদতলে করেছি ভুলুন্ঠিত
সে যে আমি জয়দ্রথ আমি তোমার প্রিয়তমা দুঃশলা
ধুলায় উড়িয়ে রাজনন্দিনীর বেশ যে তোমায় ফিরে পেতে আকুলা,
আমার দুঃখে কেঁদেছে আকাশ বাতাস কেঁদেছে মাতা গান্ধারী
দুঃখের অনলে পুড়ে হৃদয় হয়েছে খাঁটি সোনা
সেদিন বুঝেছি ভালোবাসার রাজ্যে আমিও নই পরাজিতা
জগত যাকে জেনেছে কৌরব পক্ষের কুচক্রী পরামর্শদাত্রী সে নারীও ছিলো প্রেমে সমর্পিতা।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (1 )