
বড়দিন ও তার তাৎপর্য
অঙ্কিতা চ্যাটার্জ্জী: ফাইনাল এক্সপোজার:-
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে আলোর মালায় সেজে উঠছে এইরাজ্যের চার্চগুলো। কেক তৈরি করে সেগুলো সময়মতো সরবরাহ করার জন্য বেকারিগুলোতে দ্যাখা যাচ্ছে চরম ব্যস্ততা, দম ফেলার ফুরসত নাই। সবার মধ্যে একটা সাজো সাজো ভাব। কারণ সামনে যে বড়দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর, খ্রীষ্টানদের বাৎসরিক উৎসব। এই দিনটি ঘিরে সমগ্র বিশ্বজুড়ে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখতে পাওয়া যায়। অন্য সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও ধীরে ধীরে এটাও বাঙালিদের নিজস্ব অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে। রাজ্যের চার্চগুলোতে বাঙালিদের ভিড় সেই ইঙ্গিতই দেয়।
২৫ শে ডিসেম্বর দিনটি হলো খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচারক যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। বেথেলহেমে এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন মহামানব যীশু খ্রীষ্ট। তখন থেকেই খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে বড়দিন হিসেবে পালন করে আসছে। তাদের বিশ্বাস পাপের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করতে ঈশ্বরের ইচ্ছায় কুমারী মেরীর গর্ভে পৃথিবীতে মানুষ রূপে জন্ম নেন ঈশ্বর-পুত্র যীশু খ্রীষ্ট। খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এইদিন নিজেদের পাশাপাশি সবার মুক্তি কামনা করে।
তার জন্ম নিয়ে যে বিশ্বাস খ্রীষ্টান বা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে থাকুক না ক্যানো যীশু যে প্রেম ও মানবতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন সেটা আজও মানুষের চলার পথের দিশারী হয়ে আছে। ক্ষমাই ছিল তার প্রেমের মূল বাণী। ক্রুশ বিদ্ধ অবস্থায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করেও মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও যীশু বলেছিলেন- ‘হে, পিতা ওরা জানে না ওরা কি করছে, ওরা অবুঝ ও অজ্ঞান। তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও।’- এই প্রার্থনা আজও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
সবার বিশ্বাস এইদিন উপহারের ডালি নিয়ে সান্তাক্লজের বেশে যীশু মানুষের দরবারে হাজির হন। ক্রিসমাস ট্রি, আলোকসজ্জা, উপহার, কেক, গীর্জায় গীর্জায় প্রার্থনা, প্রিয়জনের সান্নিধ্যে সময় কাটানো – সবমিলিয়ে বড়দিনের উৎসব আজ আর একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ নাই সর্বজনীনতার রূপ পায়।
তবে এর ব্যপকতা দেখে বাণিজ্যিক লাভের আশায় এখানেও কর্পোরেট সেক্টরগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটতে শুরু করেছে। আন্তরিকতার পরিবর্তে বড়দিন উৎসব এখন আনুষ্ঠানিক ও আচার সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। শুভেচ্ছাকার্ড ও উপহার বিনিময়, বেড়াতে যাওয়া, বড়দিনের কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি বড় হয়ে উঠেছে। এরফলে অর্থনীতির চাকা সচল ও গতিময় হয়ে উঠলেও মানুষ যে ক্রমশ মানবিকতাহীন নীরস যন্ত্র হয়ে উঠছে সেই খেয়াল কারও থাকছেনা!