
ইতি উপসংহার
সোমা নায়ক (যাদবপুর, কলকাতা)
কেমন আছিস মিনু? আর খবরাখবর? সব ভালো?
মনে হয় যেন, এই সেদিনের কথা!
অথচ, কতগুলো বছর কেটে গেল!
সেদিন ছিল দোল পূর্ণিমার দিন,
আমরা দুজন কলপাড়ের ওই পথে
হেঁটেছিলাম গল্প করার ছলে,
কলসি কাঁখে, দুজনাতে এক সাথে।
একটা ছেলে। কি যেন তার নাম!
হঠাৎ এসে রং দিল তোর গালে
লাল রঙের আবির দিল ঢেলে
তোর শূন্য সিঁথিতে, রংহীন কপালে।
কানে কানে আরও যেন বললো কত কি!
ভাবলাম, তোর মরার বুঝি রইল না আর বাকি!
মিনু, কি বলেছিল রে, সেদিনের সেই ছেলে?
ভুলেই গেছিস? জেনে নিতাম আবার ওকে পেলে।
তোর মনে আছে মিনু- দু্র্গো পুজোয় মেলায় যাওয়ার দিনে
কত মান অভিমান, ক্ষোভ-রাগ, জমিয়েছিলাম মনে
বাড়ি থেকে তোর অনুমতি নেই, হবে না যাওয়া তাই।
তুই বল মিনু, তোকে ছাড়া আমি কি করে যাই?
তোর বাবার ভয়ে সবাই কেমন জব্দ
তোর মুখে নেই একটাও টুঁ শব্দ!
সখ তবু তোর, আমার সাথেই যাবি
মেলায় গিয়ে- ফুচকা, ঘুগনি খাবি।
আমিই শেষে কাকুর কাছে গিয়ে
ইনিয়ে বিনিয়ে করিয়েছিলাম রাজি
অবাক কান্ড, মেলায় গিয়ে দেখি
কোথা থেকে যেন সেই ছেলে ঠিক হাজির!
সেই ছেলে তো তোকে হারায়, ক্ষণে ক্ষণে চোখে
দেখি, তুইও সেদিন সব ভুলে বেশ তাকাস অপলকে
তোর জন্য কাঁচের চুড়ি, টিপের পাতা, জোড়ায় ঝুমকো দুল
কার আবদারে খোঁপা সেদিন হয়েছিল এলো চুল!
বুঝিনি ভাবিস? তা নয় রে ঠিক, ভয় ছিল এই বুকে
কে এই ছেলে! পরিচয় কি! রাখবে তো তোকে সুখে!
তোর চোখে তো আলোর দ্যুতি, বিশ্বজয়ের খুশি
আমিই ভয়ে বলেছিলাম, সব যেন বেশি বেশি।
শুনে মেয়ের সে কি রাগ! সাতদিন কথা বন্ধ
বন্ধুর চেয়ে ছেলেটা আপন! মনের মাঝে দ্বন্দ্ব।
অভিমানে আমিও তাই ফিরিয়ে ছিলাম মুখ
তুইও দেখি এলিই না আর, ভাঙলো আমার বুক।
আমার বিয়ের পাকা দেখা, তারিখ হলো ঠিক
ছুটে গেছি তোর কাছে মিনু, ভুলেছি দিগ্বিদিক।
বলেছিলি, ভালো থাকিস, সুখে করিস ঘর
তোর কপালে সব ভালো হোক, মনের মতো বর।
মিনু রে, আমি ভালোই আছি, ঘর আর বর নিয়ে
তোর খবরও পেলাম এবার গ্রামের বাড়ি গিয়ে।
ফিরবে বলে সেই ছেলেটা ফেরেনি তোর কাছে?
জানে না, আজও তার জন্য অপেক্ষায় কেউ বাঁচে।
মিনু, একটা জীবন দীর্ঘ অনেক, অনেক ওঠাপড়া
না চাইতেও এই পোড়া মন, সাক্ষী ভাঙা গড়ার।
কি এক রোগে সব ভুলে যাই, ভুলি না কেবল তোকে
চোখের জ্যোতি আবছা যেন, দেখি না তেমন চোখে
তবু তোকে ভুলিনি মিনু, কারণে বা অকারণে
তোরই কথা মনে পড়ে, ভাবায় ক্ষণে ক্ষণে।
এখনো তুই চুপ থাকবি? এ্যাত্তো অভিমান!
বুঝিস না তুই, বুকের মাঝে কিসের এত টান!
মেয়েবেলার সুজন বন্ধু, জীবন তীরে এসে
আগলে রাখি তোরই স্মৃতি, তোকেই ভালোবেসে।
বন্ধু আমার, শেষ প্রহরে, করিস না মন ভার
ছুটি দে ভাই, এবার আসি, ইতি উপসংহার।