অপহরণের ছায়া কাটিয়ে পুলিশের বীরত্ব,গরু ব্যবসায়ী উদ্ধার,চার অপরাধীরা গ্রেফতার

অপহরণের ছায়া কাটিয়ে পুলিশের বীরত্ব,গরু ব্যবসায়ী উদ্ধার,চার অপরাধীরা গ্রেফতার

কৌশিক মুখার্জী: সালানপুর:-

আসানসোলের সালানপুর থানার কালিপাথর এলাকায় একটি চাঞ্চল্যকর অপহরণের ঘটনা স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক জাগিয়েছিল। কিন্তু সেই অন্ধকার মুহূর্তে আলোর দিশা হয়ে এসেছে পুলিশের অসাধারণ তৎপরতা। গরু ব্যবসায়ী শামসুল আনসারী (৫৩)-কে অপহরণের কবল থেকে উদ্ধার করার পাশাপাশি অপরাধীদের শৃঙ্খলিত করেছে সালানপুর ও রূপনারায়নপুর ফাঁড়ির পুলিশ। এই ঘটনা কেবল একটি সফল অভিযানের গল্প নয়, বরং জনগণের প্রতি পুলিশের অঙ্গীকারের এক জীবন্ত প্রমাণ।আজ সকালে কালিপাথর থেকে ধাঙ্গুড়ি হয়ে মেহিজামের পথে যাত্রা করেছিলেন শামসুল আনসারী। পথে ঝাড়খণ্ডের একটি এলাকায় পৌঁছতেই অজ্ঞাত পরিচয় অপহরণ কারীরা তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণের পরপরই তারা শামসুলের পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামে উৎকণ্ঠার ছায়া নেমে আসে। কিন্তু এই সংকটের মুহূর্তে পুলিশ বাহিনী নিজেদের দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছে।
সালানপুর থানা ও রূপনারায়নপুর ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই তদন্তে নামে। সময় নষ্ট না করে তারা জামুড়িয়া এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে শামসুল আনসারীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। এর পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার সন্দ্বীপ কাররা বলেন, “আমরা শামসুল আনসারীকে উদ্ধার করেছি এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, টাকা লেনদেনের কোনো বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, এই ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হবে।পুলিশের এই ক্ষিপ্রতা ও দক্ষতা গ্রামবাসীদের মনে নতুন করে আস্থা জাগিয়েছে। অপহরণকারীদের ব্যবহৃত জাইলো গাড়ি ফাঁড়িতে আনার পর উত্তেজিত জনতা গাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং বিক্ষোভ প্রকাশ করে। তবে পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য ও দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এক গ্রামবাসী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “পুলিশের এই কাজ দেখে মনে হয় আমরা সত্যিই নিরাপদ হাতে আছি।” আরেকজন বলেন, “এমন পুলিশ থাকলে ভয়ের কিছু নেই।” পুলিশের এই সাহসিকতা গ্রামের মানুষের মুখে প্রশংসার ঝড় তুলেছে।
এই উজ্জ্বল গল্পের মাঝে একটি অস্বস্তিকর দিকও উঁকি দিয়েছে।ফাঁড়িতে গাড়ি আনার পর গ্রামবাসীদের ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা নজরদারির অভাবের ইঙ্গিত দেয়। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে এই ক্ষুদ্র ঘটনা তাদের সাফল্যের গৌরবকে ম্লান করতে পারেনি।সালানপুর থানার পুলিশের এই কৃতিত্ব শুধু একটি অপহরণের ঘটনার সমাধান নয়, এটি জনগণের প্রতি তাদের নিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অপরাধের মুখে দাঁড়িয়ে তারা যে সাহস ও দায়িত্ববোধ দেখিয়েছে, তা প্রতিটি নাগরিকের মনে শ্রদ্ধা ও ভরসা জাগিয়েছে। গ্রামের মানুষ বলছেন, “এমন পুলিশ আমাদের গর্ব।” এই ঘটনা প্রমাণ করে, পুলিশ যখন জনগণের পাশে থাকে, তখন সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত খোলে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )